কিবরিয়া হত্যা মামলা: ১৪ বছরেও সম্পন্ন হয়নি বিচার

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৫ সালের এই দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় তিনিসহ ৫ জন নিহত হন। এ সময় আহত হন শতাধিক নেতা-কর্মী। তবে ঘটনার পর ১৪ বছরেও মামলার বিচার সম্পন্ন হয়নি।

জানা গেছে, ঘটনার রাতেই হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এমপি বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা করেন। পরে সিআইডি’র তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর  ২০০৫ সালের ২০ মার্চ ১০ জনকে আসামি করে প্রথম অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু মামলার বাদী ২০০৬ সালের ৩ মে না-রাজি আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন। পরে ১৪ মে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/27/1548556663549.jpg

আপিলের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সরকারের প্রতি ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল দেন। রুলের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলে সেটা খারিজ হয়ে যায়। পরে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু করে। ২০১১ সালের ২০ জুন লুৎফুজ্জামান বাবর ও মুফতি হান্নানসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।

বিজ্ঞাপন

তবে ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া চার্জশিটের ওপর না-রাজি আবেদন করেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি নারাজি আবেদন গ্রহণ করে আবারও তদন্তের নির্দেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার বণিক। এরপর সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে তৃতীয় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

নতুন আসামিদের মধ্যে আছেন-সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌর মেয়র জি কে গাউছ, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি তাজ উদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ, হাফেজ ইয়াহিয়া। একই সাথে আগের চার্জশিটভুক্ত ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আব্দুল করিম ও মরহুম আহছান উল্লাহকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের জুনে মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ১৭১ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৩ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলাটি হবিগঞ্জ আদালতে রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/27/1548556714045.jpg

এদিকে, ১৪ বছরেও বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশ নিহতের স্বজনরা। এমনকি বর্তমান সরকারের আমলে এ মামলার বিচার হবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। স্বজনদের অভিযোগ, ঘটনার পর দুই দফায় সামান্য সহযোগিতা পাওয়া গেলেও এখন কেউ তাদের খবরও নেন না।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণের ধীরগতির কারণে বিচার বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা অসুস্থতা দেখিয়ে আদালতে যাচ্ছেন না। আশা করি বর্তমান সরকারের আমলেই এই মামলার বিচার শেষ হবে এবং জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।’

মামলার বাদী হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ খান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। সুতরাং কিবরিয়া হত্যার বিচারও শিগগিরিই সম্পন্ন হবে।’

এদিকে, শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও নিহতের পরিবার। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শোক র‌্যালি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। এছাড়া ঢাকার বনানীতে মরহুমের সমাধিতে সকাল ৯টায় পুস্পস্তবক অর্পণ করবে কিবরিয়া পরিবার।

উল্লেখ্য, শাহএএমএস কিবরিয়া ১৯৩১ সালের ১ মে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জালালশাপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৫২ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান দেন। ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ১৯৫৩ সালে তিনি গ্রেফতার হন। স্বাধীনতার পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুনর্গঠনের কাজে যোগ দেন তিনি। ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে অর্থমন্ত্রী হন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই) আসন থেকে সংসদস্য সদস্য হন।