উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত হচ্ছে নবাবগঞ্জ
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় বর্তমান সময়ে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী এই উপজেলাটি প্রবাসী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় দুই লাখ ৫২ হাজারেরও অধিক ভোটার অধ্যুষিত গ্রামীণ জনপদ খ্যাত এই নবাবগঞ্জ বহুবছর উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ছিলো।
নবাবগঞ্জবাসীর দাবি, ঢাকা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপজেলায় স্বাধীনতার পর ৪৭ বছর ধরে পার্শ্ববতী এলাকার চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে ছিলো। নদী ভাঙন রোধ, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, শিক্ষার আধুনিকায়ন, গ্রামীণ যোগাযোগ বৃদ্ধিতে কাঁচা ও পাকা সড়কের সংস্কার, বিদ্যুতায়ন, শিল্পসহায়ক অবকাঠামো নির্মাণসহ আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ দিনের উন্নয়নবঞ্চিত নবাবগঞ্জের মানচিত্রে যুক্ত হয় নতুন নির্মিত সড়ক, সেতু, ভবনসহ গ্রামীণ অবকাঠামো। এই উপজেলার সাথে পার্শবর্তী জেলা ও উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে।
বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নসহ উপজেলার গ্রাম পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক সংস্কার, ইছামতি ও কালিগঙ্গা নদীতে বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত সমাপ্ত হয়। ফলে এই জনপদের মানুষের বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু হয়।
উপজেলার দৌলতপুরে র্নিমিত হয় ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা নবাবগঞ্জবাসীর জন্য গৌরবের বিষয় বলে ধরে নেওয়া হয়।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সূত্রমতে, ২০০৯-১৪ সাল পর্যন্ত নবাবগঞ্জ উপজেলায় মোট ১৫৭টি প্রকল্পর উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয় ৮৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে।
পরবর্তীতে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পল্লী সড়ক-কালভার্ট মেরামত কর্মসূচী, বৃহত্তর ঢাকা জেলার অবকঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প গৃহীত হয়।
আরটিআইপি-২ প্রকল্প, শিল্পকলা একাডেমি প্রকল্প, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা ও উনিয়ন সড়কে সেতু নির্মাণ প্রকল্প, উপজেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, তৃতীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পসহ মোট ১০১টি উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হয়।
এসব প্রকল্পে মোট ১৩২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যা স্বাধীনতা পরবর্তী নবাবগঞ্জের উন্নয়নে সর্বোচ্চ ব্যয়। গত ২০০৯-১৪ সময়ের চেয়ে ২০১৪-১৭ সময়ে প্রায় ৪৮ কোটি টাকার ও অধিক উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয়েছে।
উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের দৈনিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি হওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার লাভ করেছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এখন বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় মেয়েরা শিক্ষা ও চাকরিতে এগিয়ে আসছেন, উপজেলা সদরে বিভিন্ন ব্যবসার সাথেও যুক্ত হচ্ছেন তারা। শতভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আসায় গ্রাম্য এলাকাতে সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ উপজেলার শতকরা ৭৫ শতাংশ মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিভ, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ ব্যাবহার করে দেশ-বিদেশে স্বজনদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন।
স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন কৃষি পণ্য বিভিন্ন পরিবহনে করে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নিয়ে বিক্রি করছেন, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আড়তে নিয়েও বিক্রি করতে পারছেন।
নবাবগঞ্জ ও দোহারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয় বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, ‘নবাবগঞ্জের ইছামতি ও কালিগঙ্গা নদীতে সেতু নির্মিত হওয়ায় এই উপজেলার সাথে মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে।’