৫০ বছরেও মেলেনি ‘শহীদ হারুনের’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শহীদ হারুন পার্ক। ছবি: বার্তা২৪.কম

শহীদ হারুন পার্ক। ছবি: বার্তা২৪.কম

মৃত্যুর ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত ময়মনসিংহের গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক হারুন রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর গৌরীপুর পৌর শহরে তার নামকরণে ‘শহীদ হারুন পার্ক’ গড়ে তোলা হয়। কিন্তু সেই জায়গাটুকুও এখনো পার্কের নামে সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

স্থানীয়রা জানায়, দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের কারণে ছোট হয়ে আসছে শহীদ হারুন পার্কের সীমানা। আলোকসজ্জা না থাকায় রাতে পার্কের ভেতর মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়ছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলে নষ্ট করছে পার্কের পরিবেশ। তাই হারুনের নামে গড়ে ওঠা পার্কটি ভবিষ্যতে থাকবে কী থাকবে না সেটা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, পূর্ব-পাকিস্তানি শাসকদের পতনের দাবিতে গণআন্দোলনের ডাকে ১৯৬৯ সালের ২৭ জানুয়ারি গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পৌর শহরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ধান মহাল এলাকায় আসতেই পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক হারুন।

বিজ্ঞাপন

শহীদ হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল্লা গ্রামে। সেখানকার নান্দাইল-আঠারবাড়ি সড়কের পাশেই হারুনকে দাফন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের পর হারুন গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানের পাশে ধানমহাল এলাকায় খাস জমিতে শহীদ হারুন পার্ক গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকে শহীদ হারুন স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ২৭ জানুয়ারি স্থানীয় ভাবে ‘শহীদ হারুন দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ২০০৫ সালে গৌরীপুর পৌরসভার অর্থায়নে পার্কে সীমনা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালে পার্কের উত্তর পাশে হারুনের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও এই পার্কটির ভেতরে রয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও একটি শহীদ মিনার।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/28/1548658051170.jpg

এ বিষয়ে গৌরীপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বার্তা২৪.কমকে জানান, হারুন পার্কের ৪২ শতাংশ খাস জমির মধ্যে সরকারি বরাদ্দে সোয়া ৮ শতাংশে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করা হয়েছে। ৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও ড্রেন দখল করে নিয়েছে। তবে শ্রেণির পরিবর্তন নিয়ে জটিলতা থাকার কারণে হারুন পার্কের নামে বাকি জমিটুকু বরাদ্দ নেয়া যাচ্ছে না।

সোমবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হারুন পার্কের সীমানা প্রাচীর ঘিরে কমপক্ষে ১২টি অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে। গেট না থাকায় পার্কের ভেতরে কুকুর ও বিড়াল অবাধে বিচরণ করছে। পার্কের ভেতর শহীদ মিনারের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে স্যানিটারি কারখানা। সংস্কারের অভাবে শহীদ হারুন স্মৃতিস্তম্ভের পাশে আগাছা জন্ম নিয়েছে। মানুষ এই স্তম্ভের পাশে প্রস্রাব-পায়খানা করছে। পার্কের সামনের সীমনা প্রাচীর ঘেঁষে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা চায়ের দোকানের ময়লা পানি ও নোংরা আবর্জনাগুলো প্রতিদিন এখানে ফেলা হচ্ছে। ফলে এই চত্বরটি বর্তমানে দুর্গন্ধযুক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড হারুন আল বারী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে হারুন ভাই দেশের জন্য শহীদ হলেও এখন পর্যন্ত তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিলেনি। তার নামকরণে গড়ে ওঠা পার্কের জমিটুকুও সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এই বিষয়গুলো খুবই দুঃখজনক। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, শহীদ হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও স্মৃতি রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হোক। নয়তো আগামী প্রজন্ম একদিন এই শহীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস ভুলতে বসবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শহীদ হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও হারুন পার্কের নামে জমি বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। আর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়টি পৌরসভা দেখবে।’