অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ ইউএনও'র
বিগত ৬ মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোন অর্থ বরাদ্দ দেননি, অথচ অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজ নিয়ে।
সম্প্রতি চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে কলেজের অধ্যক্ষ বেশকিছু খরচের ভাউচার পাশ করানোর জন্য জমা দিলে ইউএনও এতে অসঙ্গতি খুঁজে পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কলেজ অধ্যক্ষের আর্থিক অসঙ্গতির যেসব অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে, কলেজের অনার্স শাখার শিক্ষক, যারা অন্য কলেজে চাকরি করেন এবং সেখানে এমপিওভুক্ত, অথচ ২০১২ সাল থেকে চাটমোহর সরকারি কলেজ থেকে বেতন নিচ্ছেন। একই ব্যক্তি দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন গ্রহণ করছেন অধ্যক্ষর যোগসাজশে।
এদিকে, অধ্যক্ষ কলেজের মার্কেটের চুক্তি ও ভাড়া হালনাগাদ করেননি। ৫ বছরের ভাড়ার চুক্তি নবায়ন না করেই অধ্যক্ষ নিজের মতো করে ভাড়া তুলছেন। কলেজ থেকে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২/৩শ’ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ পরীক্ষার নামে অধ্যক্ষ প্রতিটি বিষয়ে ৫০ টাকা করে আদায় করেছেন। কলেজের বাগান পরিষ্কারের নামে অর্থ তছরুপ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি কলেজের বিভিন্ন খাতের ব্যয়ের ১০০ ভাউচার অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমারের নিকট পাঠানো হয়। ভাউচার পাওয়ার পর ইউএনও আর্থিক ব্যয়ের বিষয়টি তদন্ত করে অসঙ্গতি পান। এরপর গত ১৭/০১/১৯ ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার দপ্তরের স্মারক নং ০৫-৪৩.৭৬২২.০০০.৩৯.০০৩.১৯-১১৩ পত্রে ভাউচারের আর্থিক অসঙ্গতি সংশোধন করে তা পাঠানোর কথা বলেন।
ইউএনও অফিসের প্রসেস সার্ভেয়ার কয়েকদিন পত্র নিয়ে কলেজে গেলেও অধ্যক্ষ তা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে ইউএনও ডাকযোগে সেই পত্র প্রেরণ করেন। অধ্যক্ষ পত্র পাওয়ার পর তার দফতরের স্মারক নং চাসক/০৬/২০১৯,তাং২৩/০১/২০১৯ ইং পত্রে চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইউএনও ব্যক্তিগত আক্রোশে ও কলেজের বিরুদ্ধে বহিরাগত একটি চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও পত্র প্রেরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
অধ্যক্ষ তার পত্রে ১২ দফা ফিরিস্তি উল্লেখ করে বলেছেন যে, 'ইউএনও অন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে চাটমোহর সরকারি কলেজের উন্নয়ন কাজ করে যাবেন।'
এ সকল বিষয়ে চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'ইউএনও মহোদয়কে সরকার যেদিন থেকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেদিন থেকে উনি একটি টাকাও কলেজকে দেন নাই। যেমন জাতীয় শোক দিবস পালন, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন, বিদ্যুৎ বিল, মহান বিজয় দিবস পালনসহ অন্য কোন অনুষ্ঠানে কোন টাকা দেয় নাই। সেখানে ভাউচার অসঙ্গতি কিভাবে হলো। এখানে প্রিন্সিপালের ব্যক্তিগত একটি ভাউচারও নাই।'
শিক্ষকদের অন্য কলেজে চাকরির বিষয়ে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, 'সেটা তো আমি জানিনা। কেউ যদি অন্য কলেজে ক্লাস নেন, তাহলে তো সে সম্মানী পান। সেতো বেতন নেন না। সরকারি টাকা না। ইউএনও তার দায়িত্বকালে প্রায় ৬ মাস একজন টিচারকেও বেতন দেন নাই। ইউএনও হয়তো কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এটা করছেন।’
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সরকার অসীম কুমার বলেন, 'প্রশংসাপত্র বিনামূল্যে দেওয়ার কথা, কিন্তু প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২/৩শ’ টাকা করে নিয়েছেন। সেগুলোর ডকুমেন্ট আছে। অনার্সের শিক্ষকদের বেতন বিল দিয়েছেন, আমি বলেছি বেতন দিবো। যাদের সঠিকভাবে নিয়োগ আছে, তারা পাবেন। অনেকে অন্য কলেজে চাকরি করেন, অথচ ২০১২ সাল থেকে এখান থেকেও বেতন নিচ্ছেন। একজন কীভাবে দুই জায়গা থেকে বেতন নেন। এটা আর্থিক অসঙ্গতি। তারপর মার্কেটের ভাড়া বা চুক্তি হালনাগাদ করেননি। তিনি তার মতো করে ভাড়া ওঠাচ্ছেন। বিষয়টি আমি এমপি মহোদয়কেও জানিয়েছি।'
ইউএনও বলেন, 'টাকা প্রতিষ্ঠানের, ব্যক্তিগত কারো পকেটে যেন এই টাকা না যায়, তা দেখা হবে। সঠিক হলে বিল দেবো। আমি কোন অনিয়মের সাথে নেই।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার আরও বলেন, 'কলেজের অধ্যক্ষ প্রায় ৩ লাখ টাকার বিল-ভাউচার দিয়েছেন। আগে কলেজের পাশ বই, ক্যাশ বই ঠিক ছিলো না, পরে আমি ১ মাসের মধ্যে ঠিক করার কথা বলেছি। যে খাতের টাকা সেই খাতে ব্যয় করতে হবে। তারপরও দেখা যায় পরীক্ষার খাতের টাকা খরচ করেছে, সেই টাকা বিবিধ খাতেও খরচ দেখিয়েছে। আবার অনেক বানানো ভাউচার, যার কোন হদিস নাই। কলেজের বাগান পরিষ্কারের নামে অনেক টাকার বিল করা হয়েছে। সেগুলোর সত্যতা মেলেনি। এভাবে প্রায় অর্ধেকের বেশি ভাউচারে অসঙ্গতি। অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে, কোথায় কীভাবে খরচ করেছেন, তা জানান। উনি জানাননি'।
ইউএনও বলেন, 'সরকার যেহেতু আমাকে আর্থিক বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছে, আর্থিক বিষয়ে স্বাক্ষর করতে হলে আমাকে দেখে করতে হবে। যা দিবে, তাতো চোখ বন্ধ করে করতে পারিনা। আমার চিঠি নিয়ে প্রসেস সার্ভেয়ার কয়েকদিন গেছে, তিনি চিঠি নেননি। পরবর্তীতে সরকারি নিয়ম অনুসারে ডাকযোগে দিয়েছি। আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়ে ৩ দিনের মধ্যে জানানোর কথা বলা হয়েছে। সঠিক থাকলে বিল পেয়ে যাবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অধ্যক্ষ বেশ কিছু ইস্যু তৈরি করেছেন নিজের দোষ ঢাকতে'।