সিলেবাস শেষ করতে কোচিং-ই ভরসা

  • হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, লক্ষ্মীপুর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

লক্ষ্মীপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এটি শহরের নামী-দামি বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। এখানে ভর্তি হতে হলে ভালো শিক্ষার্থী হতে হয়। কিন্তু এ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নতুন চিন্তায় পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কারণ সিলেবাস শেষ করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট কোচিংয়ে পড়তে হয়।

প্রাইভেট কোচিংয়ে না পড়লে সিলেবাস শেষ হয় না। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুদৃষ্টিও তখন কু-দৃষ্টিতে রূপ নেয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, এ বিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষের পড়ালেখা অনেকটা নিয়মরক্ষার মতো। শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্যই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন। নামমাত্র পাঠদানে দায়িত্বে থাকা সময়টুকু তারা নষ্ট করেন। বিদ্যালয়ের ছুটির পরই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিং পড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কয়েকজন শিক্ষক। শ্রেণি কক্ষেই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট কোচিং পড়ান তারা। এজন্য অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রূপালি প্রভা নাথ নিজের তত্ত্বাবধানে দু’জন সহকারী দিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। পাঠদানের সময় শেষে শ্রেণীকক্ষেই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো হয়। এতে মাস শেষে সরকারি বেতনভাতা ছাড়াও কামিয়ে নিচ্ছেন লক্ষাধিক টাকা। সিলেবাস শেষ করতে অধিকাংশ অভিভাবকই বাধ্য হয়ে তাদের ছেলে-মেয়েকে প্রাইভেট কোচিং পড়াচ্ছেন। যারা প্রাইভেট কোচিংয়ে পড়ছেন না তারা শিক্ষকদের সুদৃষ্টি থেকে দূরে পড়ে থাকেন। এটি এখন অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যালয়ের আশপাশের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের আশপাশের শিক্ষার্থী হয়েও ভর্তি হতে পারেনি তাদের সন্তান। এ বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দূর-দূরান্তের। নির্দিষ্ট এলাকার (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালায় প্রাধান্যের কথা থাকলেও এখানে ঘটছে ভিন্নরূপ। এই কারণে এ এলাকার শিশু শিক্ষার্থীদের কিন্ডার গার্টেন ও দূরের বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হয়। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

সম্প্রতি সন্ধ্যার সময় বাসায় যাওয়ার পথে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে জানা যায়,পাঠদান শেষে শিক্ষকদের কাছেই তারা প্রাইভেট পড়েন। এতে পরীক্ষার সময় শিক্ষকরা তাদের সহযোগিতা করেন। এমনকি পরীক্ষায় তারা ভালো ফলাফল পেয়ে থাকেন।

তারা আরও জানায়, বিদ্যালয় ছুটি হয় বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে। পাঠদান চলাকালীন সময়ে ভালো করে পড়া বুঝি না। এজন্যই প্রাইভেট পড়ি। এ কারণে মাঝেমধ্যে বাসায় যেতে দেরি হয়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ১৯৬৫ সালে এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১২৪, প্রথম শ্রেণিতে ১৫৯, ২য় শ্রেণীতে ১৫২, ৩য় শ্রেণিতে ১৭১, ৪র্থ শ্রেণিতে ১৪৩ ও ৫ম শ্রেণিতে ১৪৯জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ১৩ জন শিক্ষক রয়েছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রূপালী প্রভা নাথ বলেন, আমার জানামতে বিদ্যালয়ে প্রাইভেট কোচিং পড়ানো হয় না। একটি মহল চাকরি ক্ষেত্রে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।