আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন: নদীকে জীবন্ত সত্ত্বার স্বীকৃতির দাবি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পটুয়াখালী, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কুয়াকাটায় আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলেন/ছবি:বার্তা২৪

কুয়াকাটায় আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলেন/ছবি:বার্তা২৪

নদী বাঁচাতে নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন নদী নিয়ে কাজ করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষক এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দখল, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন করে নদী মেরে ফেলছি আমরা। কারণ নদীর অনুভূতিকে আমরা আমলে নেই না। নদীর নিজস্ব একটা সত্ত্বা আছে সেটি আমরা ভাবিনা।

মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ‘রিভার: এ লিভিং বিয়িং’নামের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলেনের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে এমন কথা উঠে আসে। আলোচকরা বলেন, নদীর অধিকার রক্ষায় এবং নদীকে নদীর  মতো থাকতে দিয়ে নদীর অনুভূতিকে আমলে নিয়ে তার সত্ত্বার স্বীকৃতি দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

দু‘দিনের আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের প্রথম দিনে মূল বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদী মরে যাওয়ার প্রভাব পরে আমাদের জীবন-জীবিকায়। ফলে নদীকে নদীর মত থাকতে দেয়ার বিকল্প নেই। নদীর জীবনকে মানুষের মূল্যায়ন করতে হবে। এছাড়া নদী বাঁচানো যাবে না।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফারাহ্ কবির একটি ধারণাপত্র তুলে ধরেন। ধারণাপত্রে বলা হয়, পানি এবং জীবন সমার্থক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ পানির অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নদীর অধিকার এখনো ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। দক্ষিণ এশিয়া শত-শত নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। যেহেতু এ নদীগুলোর অধিকাংশই আন্তঃসীমান্ত নদী, তাই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং মায়ানমারে বসবাসরত মানুষের কাছে এসব নদীর পানি একটি সাধারণ প্রাকৃতিকসম্পদ। যা মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, “নদীকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদীকে ভালভাবে বুঝতে হবে। নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা। আমাদের এই জীবন্ত সত্ত্বাকে ভালভাবে বুঝতে হবে। নদীর অনুভূতিকে বুঝতে হবে। এসব অনুধাবনের পর নদী বিষয়ক প্রকল্প হাতে নিতে হবে। নদীর যে সত্ত্বা আছে সেটি বুঝা যায় যখন নদী মরে গেলে মানুষের উপর তার প্রভাব পরে। নদী যখন খারাপ থাকে তখন মানুষের জীবনেও খারাপ প্রভাব পড়ে। নদী যে একটি জীবন্ত সত্ত্বা তা আমরা আমলে নেই না। কারণ নদীর অধিকার ও সত্ত্বা আমার ধ্বংস করছি দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরির্তনের মাধ্যমে।”

তিনি আরো বলেন, “নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের নদীকেন্দ্রিক এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, “জীবন বাঁচাতে পানি দরকার; জীবনের জন্য পানি দরকার। সেই পানিই যদি না থাকে তবে আমরা থাকতে পারব না। বাস্তবতা হলো আমরা নদীগুলো মেরে ফেলছি। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ আমরা করতে পারিনা। যারা প্রয়োগ করবেন তারা তা করেন না বা করতে পারেন না। নদীর মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র নদীর সত্ত্বাকে বাঁচাতে আইন করেছে। তবে পরিকল্পনায় অনেক গলদ আছে।