প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ফের জেগেছে হিটলার
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বইলর ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার ইটভাটা ‘হিটলার ব্রিকস’। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও ছাড়পত্র ছাড়াই গত বছর তিন ফসলি জমিতে গড়ে তুলা হয় এ ভাটাটি। এর কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় স্থানীয় কৃষকদের। কৃষিজমি দখলে নিয়ে এটি নির্মাণ করার অভিযোগও রয়েছে।
অনুমতি, ছাড়পত্র ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেল বছরের ২৭ নভেম্বর হিটলার ব্রিকসের ভাটাটি গুড়িয়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এর মাস দেড়েক যেতে না যেতেই প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভাটাটি সংস্কার করে ইট তৈরির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মালিকপক্ষ।
জানা গেছে, স্থানীয় সুজন মিয়া, মো. সৈকতসহ ভাটার ছয় মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কিছু বলতে পারছে না কেউই।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ওই ভাটার আশপাশে প্রায় ১৫ একর জমিতে তিন মৌসুমেই ধান উৎপাদন হতো। তাদের অভিযোগ, ভাটার মালিকপক্ষ জোর-জবরদস্তি ও মারধর করে তাদের জমি দখলে নিয়ে ভাটা নির্মাণ শুরু করে। ফলে আউশ ধানের চারা রোপণ ও বোরোর আবাদও করতে পারেননি কৃষকরা। সেসময় ভাটা নির্মাণের জন্য জোরপূর্বক জমি দখল নেয়ার চেষ্টা করলে জমির মালিক হামেদ আলী ও অন্যান্যদের সঙ্গে ভাটা মালিকপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় হিটলার ব্রিকসের মালিকদের বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় মামলাও হয়।
জানা গেছে, ওই এলাকায় গত বছরের শুরুর দিকে তিন ফসলের কৃষি জমিতে হিটলার ব্রিকস নামে একটি ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।
২০১৩ সনের (৫৯ নং আইন) ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনকে তোয়াক্কা না করে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার অনুমতি, ছাড়পত্র ছাড়াই কৃষি জমিতে হিটলার ব্রিকস নামে ভাটা নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
অনুমোদন ছাড়াই ১০ একর কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় গত বছরের মার্চ মাসে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ওই সময়ের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বীপক কুমার পাল।
এরপর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরশাদ উদ্দিন ভাটার নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তবে তা অমান্য করে বীরদর্পে চলে ভাটা নির্মাণ। কয়েক দফা বন্ধের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল জাকিরও।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভাটার কাজ চালিয়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৭ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরশাদ উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গুড়িয়ে দেন ওই ভাটা। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে যখন ব্যস্ত ছিলো প্রশাসন, ওই ফাঁকে ভেঙ্গে ফেলা অংশটুকু সংস্কার করে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকদের পক্ষে কামাল হোসেন, শহীদ মিয়া, বায়েজিদ, হাসমত আলী ও মোহাম্মদ আলী উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভেঙ্গে ফেলার পর ভাটা ফের চালু করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূর আলম জানান, হিটলার ব্রিকস চালুর ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে তাদেরকে কোন প্রকার অনুমতি বা ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।
ইউএনও আব্দুল্লাহ আল জাকির বলেন, ‘ভাটা পুন:সংস্কারের আগে উপজেলা কৃষি বিভাগের অনুমতির জন্য মালিকপক্ষ এসেছিল। কিন্তু আমরা তাদের কাজের অনুমতি দিইনি। এমন হলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরও ফের অবৈধভাবে ইটভাটার কাজ শুরু করলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’