লাউকাঠী-লোহালিয়া নদী এখন আবর্জনার ভাগাড়
লাউকাঠী ও লোহালিয়া নদীকে কেন্দ্র করেই পটুয়াখালী শহরে এক সময় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছিলো। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ সেই নদী দুইটি চরম অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছে।
শহরের প্রতিদিনের ময়লা আবর্জনা ট্রাকে করে এসব নদীর তীরে ফেলা হচ্ছে। আর শহরের সকল অপচনশীল বর্জ্য ও নোংড়া পানি ড্রেনের মাধ্যমে গিয়ে মিশছে এই দুটি নদীতে।
অপরদিকে, অপরিকল্পিত নদী শাসন ও দখলদারদের থাবায় দিন দিন ছোট হচ্ছে নদীর প্রস্ত। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীকেন্দ্রীক চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ও নদীর প্রতি যত্নবান না হলে অচিরেই বিলীন হবে এসব নদী।
পটুয়াখালী শহরের উত্তর ও পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লাউকাঠী ও লোহালিয়া নদী। এই নদী দুটি থেকে শহরের মধ্যে এক সময়ে প্রবেশ করেছিলো ২১টি ছোট বড় খাল। যার অধিকাংশেরই এখন অস্তিত্ব নেই। এসব খালগুলো এখন চার থেকে ছয় ফুট ড্রেনে পরিণত হয়েছে।
তবে বর্তমান সময়ে নদীকেই গলাটিপে হত্যা করার উপক্রম হয়েছে। পটুয়াখালী পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকার ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে ভ্যান ও ট্রাকে করে লোহালিয়া খেয়া ঘাটের উত্তর পাশে নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণ করা শহর রক্ষা বাঁধের বাইরে ফেলা হচ্ছে।
এক সময়ে শহরবাসী নদীর পাড়ে মুক্ত বাতাসের সন্ধানে আসলেও এখন দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসে এই এলাকা দিয়ে হাটা চলা করাই রীতিমত দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বেওয়ারিশ কুকুর আর কাকের দখলে থাকা এই ময়লা আবর্জনার এই ভাগাড় অচিরেই দখলদারদের কবলে পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
নদী ও পানি অধিকার নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নদীকে বাঁচাতে হলে নদীকেন্দ্রীক চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার পূর্বে নদীকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। ভাবতে হবে নদীরও প্রাণ আছে, নদীরও আত্মা আছে। নতুবা নদী মরে গেলে কিংবা নদীদূষণ হলে পরবর্তীতে আমাদেরকেই এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে।’
জেলার অন্যসব নদীর থেকে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো সব থেকে বেশি দখল ও দূষণের কবলে পড়ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নদীর দুই পাড়ের জমির দাম ও গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া, উন্নয়ন বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুযোগ না থাকা।
ফলে এসব নদী মরে যাওয়ার পাশাপাশি নদীকেন্দ্রিক অর্থনীতি যেমন হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনি বিলীন হচ্ছে নদীর বিভিন্ন জলজ প্রাণীসহ নদীতে বসবাস করা মাছ ও কীটপতঙ্গ। এর ফলে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।