‘তোমরা দেখে দেখে লিখবা, তবে কথা বলবা না’
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ আহমেদিয়া কামিল মাদরাসার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হলেন মহসিন এবং গণিতের শিক্ষক হলেন বদরুদ্দোজা কিরণ। চলতি দাখিল পরীক্ষায় (এসএসসি) হাজীগঞ্জ বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল মাদরাসায় তাদের দুইজনকে পরীক্ষা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার সময়ে নকল সরবরাহ করেন তারা। এ বছরও একই কাজ করেছেন।
এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া হাজীগঞ্জ আহমেদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হেফজুর রহমানকে শোকজ করেছেন।
জানা গেছে, শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে দাখিল পরীক্ষার্থীদের কোরআন বিষয়ের উপর পরীক্ষা ছিল। হাজীগঞ্জ আহমেদিয়া কামিল মাদরাসায় পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পূর্বে গিয়ে দেখা মিলল ওই দুই শিক্ষকের। ইংরেজি শিক্ষক মহসীন শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমরা দেখে দেখে লিখবা। তবে কথা বলবা না।’ অন্য শিক্ষক বদরুদ্দোজা কিরণও একই হলে ছিলেন। ক্যামেরা চালু করার পর দুইজন কোনো কথা না বলে একেবারেই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান।
কিন্তু পরীক্ষা শুরুর পর বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল মাদরাসায় গিয়ে দেখা মিলেনি ওই দুই শিক্ষককের। অথচ ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব ছিলেন তারা।
এদিকে বার্তা২৪.কমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্য। আর তা হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে ওই দুই শিক্ষক পরীক্ষার ডিউটি অলিখিতভাবে পরিবর্তন করে আসছেন। তাদের পরীক্ষার ডিউটি পড়ে হাজীগঞ্জ বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল মাদরাসায়। অদৃশ্য কারণে বরাবরই তাদের ডিউটির সময় কর্মরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাজীগঞ্জ আহমেদিয়া কামিল মাদরাসায় দেখা মিলে।
জানা গেছে, ওই দুইজন প্রতি বছর বেলচোঁ ফাজিল মাদরাসায় পরীক্ষা পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেখানে কোনো ডিউটি করছেন না। তারা দুইজনে মিলে হাজীগঞ্জ আহমেদিয়া কামিল মাদরাসার ছাত্রাবাস ও কোচিং সেন্টারসহ সুবিধা মতো স্থানে পরীক্ষা শুরু হবার আধাঘণ্টা, একঘণ্টা পূর্বে নকলের মহড়ায় যুক্ত থাকেন।
হাজীগঞ্জ আহমেদিয়া কামিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল বলেন, ‘এই দুই শিক্ষক ভেতরে প্রবেশের সময় এখানে গার্ডে আছেন বলে জানান। অথচ এখন শুনলাম তাদের ডিউটি বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল মাদরাসায়।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া জানান, বিষয়টি জেনে হাজীগঞ্জ আহমেদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হেফজুর রহমানকে শোকজ করা হয়েছে। ওই শিক্ষকরা কেন এই কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে তার ব্যাখ্যা শোকজে দিতে বলা হয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, দাখিলে হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ১৬১ জন। এসএসসিতে ৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৫৫৭ জন।