মৌমাছির বন্ধু শ্রীমঙ্গলের মধু কামাল
যেখানে মৌমাছিরা দলবদ্ধ থেকে বাসা বাঁধে সেখানেই কামাল নামের এক ব্যক্তিকে খোঁজ করে এলাকার লোকজন। মৌমাছির বাসায় যদি কেহ নড়াচড়া করে তাহলে তারা উড়ে উড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় অনেক সময় লোকজনকে কামড় দিয়ে আহত করে। কিন্তু যত বড়ই মৌমাছির চাক থাকুক না কেনো মধু কামালের কাছে যেন মৌমাছিরা নত হয়ে তার নিকট আশ্রয় নেয়।
তার গায়ে মৌমাছিরা দলবদ্ধ হয়ে বিস্তার করে। এমনি একজন মৌমাছিবান্ধব মানুষ মৌলভীবাজার জেলায় সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের ইজরাগাঁও গ্রামের কামাল মিয়া। এলাকার লোকজন তাকে মধু কামাল বলেই ডাকে। তার পিতা মরহুম কনর মিয়া।
দীর্ঘদিন থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। তার মধু সংগ্রহের পদ্ধতি বেশ ভয়ংকরও বটে। মনে হয় মৌমাছিগুলো তার একান্ত বন্ধু। তাকে কামড়ায় না, কোনো উৎপাত করেনা মৌমাছিরা যন্ত্রণা দেয় না। এলাকায় তাকে মধু কামাল বলে ডাকা হয়। মধু সংগ্রহের জন্য তাকে এলাকার অনেকেই ডাকে। ডাক আসলে ছুটে যান দূর দূরান্তে। একান্তই সখের বশীভূত হয়ে তিনি নিজেকে এখন ব্যস্ত রাখছেন এ পেশায়।
ইজরাগাঁও গ্রামের ফুরুক মিয়া বলেন, 'কামাল মিয়া অনেক দিন ধরে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। মৌমাছিরা তার একান্তই বন্ধুর মতো। শুরুতে মৌচাক (বলারচাক) ভাঙতে গিয়ে অনেক মৌমাছি তাকে কামড়িয়েছে। এখন মোমাছিরা মৌচাক ভাঙার সময় তার গায়ে ভালোবাসার আদর বুলিয়ে দিলেও কামড়িয়ে আহত করে না। এলাকার লোকজন কোথাও মৌচাক দেখলে তাকে খবর দিয়ে মধু সংগ্রহ করিয়ে থাকেন।'
সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ডা. একরামুল কবীর বলেন, 'মধু কামাল অনেক সাহসী। মধু সংগ্রহকালে দেখা যায় তার গায়ে এসে মৌমাছিরা আপস মেনে নেয়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সারা গ্রামে কামাল মিয়া মধু সংগ্রহ করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে সে এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। যদি সরকারি বা অন্যকোনভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পায় তাহলে মধু কামাল নিজে মধু চাষ করে নিজেকে আরও স্বাবলম্বী করে তুলতে পারবে। এলাকার অনেক যুবকরাও তার সাথে মধু চাষে এগিয়ে এসে বেকারত্ব দুর করতে পারবে।'
মধু সংগ্রহকারী কামাল মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের মধু নিজ হাতে যত্ন সহকারে সংগ্রহ করে থাকেন। যেমন শস্য ফুল, লিচু ফুল, বরই ফুল ইত্যাদি। মৌমাছিরা ওনার গায়ে এসে বসে থাকে। মৌ’রা পোষ মানে ঠিক সে কৌশল অবলম্বন করে তিনি মধু সংগ্রহ করে থাকেন। অন্য কোন মেডিসিন বা কোন প্রকার প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন না। প্রথম প্রথম মৌমাছিরা কামড় দিলেও এখন আর কামড় দেয় না। তাহার কৌশলে মৌমাছিরা তার নিকট পোষ মেনে গায়ে এসে বসে থাকে।