নানা জটিলতায় থমকে আছে বাল্লা স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নদীতে ভিজে বাল্লা চেকপোস্ট দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া করছে শ্রমিকরা / ছবি: বার্তা২৪

নদীতে ভিজে বাল্লা চেকপোস্ট দিয়ে পণ্য আনা নেওয়া করছে শ্রমিকরা / ছবি: বার্তা২৪

যুগ যুগ ধরে হবিগঞ্জের বাল্লা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পণ্য আমদানি-রফতানি হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের গড়িমসির কারণে স্থলবন্দর হিসেবে এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও নানা জটিলতায় থমকে আছে বাল্লা স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজ। বর্তমানে পণ্য আমদানি-রফতানি করা হচ্ছে নৌকায় বা মাথায় করে।

সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে স্থলবন্দরের জন্য ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে তা জানা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ১৯৫১ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা নামক স্থানে ৪ দশমিক ৩৭ একর জায়গা নিয়ে বাল্লা চেকপোস্ট চালু করা হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৯৯১ সালে পুনরায় তা চালু করা হয়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমার পাহাড়মুড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইট, পাথর, সিমেন্ট, মাছ, হলুদ, আধা ইত্যাদি রফতানি এবং ভারত থেকে কাঁচামাল, ফলমূল, চকলেট, বাঁশ ইত্যাদি পণ্য আমদানি হচ্ছে। অবকাঠামো বলতে টিনের চাল ও বেড়ার দুটি অফিস ঘর ও চেকপোস্ট রয়েছে। তবে পণ্য রাখার কোনো গুদাম নেই।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/04/1549255258561.jpg

বিজ্ঞাপন

দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলছে খোয়াই নদী। বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে শ্রমিকরা মাথা ও কাঁধে করে পণ্য আনা-নেওয়া করে থাকেন। এতে একদিকে যেমন ঝুঁকি রয়েছে, অন্যদিকে আমদানি ও রফতানিকারকদের অর্থ ব্যয় হচ্ছে বেশি।

আমদানি ও রফতানিকারক ও স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান স্থলবন্দর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কেদারাকোট এলাকায় নতুন স্থলবন্দর নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রস্তাবিত এলাকায় স্থলবন্দর নির্মাণ করা হলে ট্রাক বা লরি দিয়ে সরাসরি দুই দেশে পণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব।

২০১২ সালের ১১ জুন দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধি দল কেদারাকোট এলাকাটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ওই এলাকায় স্থলবন্দর করার ব্যাপারে উভয় পক্ষই একমত হন।

২০১৭ সালে ৮ জুলাই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী হবিগঞ্জে এক মতবিনিময় সভায় জানিয়েছিলেন, ওই বছরে একনেক সভায় স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/04/1549255281055.jpg

এর আগে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ তৎকালিন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান হবিগঞ্জে এক মতবিনিময় সভায় বাল্লায় নতুন স্থল বন্দর নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন।

এদিকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের জুলাইয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ২১ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু প্রস্তাবিত জমিতে বসতবাড়ি থাকায় আপত্তি জানান স্থানীয়রা। এ অবস্থায় থমকে যায় পুরো প্রক্রিয়া।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বসতবাড়ি বাদ দিয়ে খালি জায়গায় স্থলবন্দরটি নির্মাণে তাদের কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাড়িঘর উচ্ছেদ করতে হলে তাদের স্থায়ী পুর্নবাসন করতে হবে সরকারকে।

রফতানিকারক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘পণ্য আমদানি ও রফতানিতে নৌকায় মালামাল পারাপারে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থলবন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা গেলে বছরে ২০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও রফতানি সম্ভব। বর্তমানে বন্দরের যে পরিস্থিতি তাতে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/04/1549255303961.jpg

হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টির সভাপতি মোতাচ্ছিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থলবন্দরটি নির্মাণ হলে দু’দেশের সম্পর্কের আরও উন্নতি। এছাড়া সরকারের রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, চুনারুঘাট থেকে কেদারাকোট পর্যন্ত দুই লেনের রাস্তা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মাহমুদুর কবীর মুরাদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক দফা প্রস্তাবিত জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয়দের দাবি মাথায় রেখে প্রস্তাবনা সংশোধনের চিন্তা করছেন তারা।’