অবাধে বালু উত্তোলন, ভেঙে পড়ছে চা বাগান

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চা বাগান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ছবি: বার্তা২৪

চা বাগান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ছবি: বার্তা২৪

ছোট ছোট পাহাড়ের কোলজুড়ে মনোরম চায়ের বাগান। পাশে ছোট ছোট ছড়া। ছড়া আর চা বাগানের মিতালি দেখে এক সময় মুগ্ধ হতেন দর্শনার্থীরা। ভালোবাসা যেন ছিল চির বন্ধনের। কিন্তু সেই ভালবাসায় ফাটল ধরিয়েছে বালুখেকোরা।

বালুখেকোদের নির্মম নির্যাতনে চির ভালোবাসার চা বাগানকে গিলে খাচ্ছে ছোট ছোট সেই ছড়াগুলো। ছড়াগুলো থেকে নির্বিচারে বালু কেটে প্রশস্ত খালের মতো বানিয়ে ফেলেছেন বালু ব্যবসায়ীরা। সেই খালে ধসে পড়ছে চা-গাছগুলো।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/06/1549455102613.jpg

পরিবেশ বিপর্যয়ের এ ঘটনাটি ঘটছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার সব কয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চা-বাগানে। বাগানের ভেতরে বালুমহালের ইজারা দেওয়া নিষেধ থাকলেও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তা লঙ্ঘন করেই ব্যবসায়ীদের ইজারা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা নির্বিচারে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তোলায় পুরো বাগানের চিত্রই পাল্টে গেছে। কমে গেছে সবুজের ছোঁয়া। আবার বর্তমান সময়ে বালুমহালের ইজারা না দিলেও রাতের আঁধারে কিংবা দিনের আলোতে অবৈধভাবে মাটি-বালু কেটে নেয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/06/1549455128092.jpg

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৫,৭০৩.২৪ হেক্টর জমিতে ছোট বড় ২৪টি চা-বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন চা-বাগান এলাকায় বালুমহালের ইজারা দিত জেলা প্রশাসন। ফলে বালু ব্যবসায়ীদের অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙতে থাকে চা বাগান।

দুইবছর আগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসন বাগানের ভেতরে বালুমহালগুলো ইজারা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে বালু মহালগুলো ইজারা বন্ধ করে দিলেও এখনও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতের আঁধারে কিংবা দিনের আলোতে প্রকাশ্যেই চলছে বালু উত্তোলন। এতে করে ভেঙে পড়েছে চা গাছগুলো।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/06/1549455140657.jpg

সম্প্রতি জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, চা বাগান পার্শ্ববর্তী নদী-ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন চা বাগানের অনেক অংশ ধসে পড়েছে। সেই সঙ্গে চা বাগান এলাকার টিলাও ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি সড়ক, মহাসড়ক ও আন্তঃমহাসড়কের অনেক স্থানে ব্রিজ ধসে পড়ারও উপক্রম হয়েছে। 

চা বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অনেকে সরকারিভাবে লিজ নিয়ে চা বাগান এলাকা থেকে মাটি বালু উত্তোলন করায় চা বাগানে ভাঙন ধরে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার্থে পরিবেশ আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ ভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা বাগান কর্মকর্তা বলেন- সিলেটকে চা ও বনজ সম্পদ আয়ের অন্যতম স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সিলেটকে মরুভূমিতে পরিণত করার হীন প্রক্রিয়া চলছে। অথচ সরকার কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বাগানের পার্শ্ববর্তী নদী-ছড়া থেকেই প্রতিনিয়ত মাটি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সে সঙ্গে কেটে সাবাড় করা হচ্ছে ছোট বড় টিলাও। আর এর সঙ্গে পুরোপুরিভাবে যোগসাজস রয়েছে সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের।

তিনি আরও বলেন, সরকারি রাজস্ব আদায়ের নামে সেই কর্মকর্তারা এখান থেকে মাটি বালু উত্তোলনের অনুমতি দিচ্ছে। ফলে ধ্বংসের মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চা শিল্প।

এ ব্যাপারে চা শ্রমিক অর্জুন মুন্ডা বলেন- বালু উত্তোলনের কারণে চা বাগানগুলো ভেঙে পড়ছে। কিন্তু প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। চা বাগান যদি না বাঁচে তাহলে আমরা কি করে বাঁচবো।

চা শ্রমিক নিকিল পাল বলেন- বাগান কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কিছু না বললে আমরা কি করব। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি। কিছু করার নাই। বৃষ্টি হলেই চা বাগানে ভাঙন দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি বলেন- আমি সম্পূর্ণভাবে বালু উত্তোলনের বিপক্ষে। সব সময় আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলি। কারণ বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।