মিষ্টি পানের হাসি-খুশি ব্যবসায়ী আফাজ বেপারী
মিষ্টি পান বিক্রেতা আফাজ উদ্দিন বেপারী। তার কাছে ৪০ পদের মশলা দিয়ে বানানো পান পাওয়া যায়। দামও কম, ক্রেতাও বেশি। অনেকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ৫-৬টি পানও খেয়ে থাকেন। তবে মিষ্টি পানের ব্যবসাতে স্থায়ী নন। বছরের বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ ভাবে নানা ধরনের ব্যবসা করেন তিনি।
শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ এলাকায় একটি ওয়াজের তাবুর সামনে আফাজ বেপারীকে পান বিক্রি করতে দেখা যায়। তখন তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে বেশ হাসি-খুশি ভাবেই সম্বোধন করেন। এ ব্যবসাটি করে তিনি সফল বলেও জানান। কারণ নিজের ইচ্ছে মতো কাজে যেতে পারেন। কারো কথা শুনতে হয় না। ইচ্ছে হলে ব্যবসার বাহন ভ্যান গাড়ি নিয়ে বের হন। আর ইচ্ছে না হলে বের হন না।
তার ভ্যানগাড়িতে দেখা যায়, নানা রকম মসলা ভর্তি বয়াম। ওইসব মসলা দিয়ে পান সাজানো আছে। আর এসব পান খেতে তার দোকান ঘিরে রেখেছে ক্রেতারা।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ এলাকার মৃত সেরাজুল হক বেপারীর ছেলে আফাজ বেপারী। বর্তমানে তিনি সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের রসুলগঞ্জ বাজারের পশ্চিমে ভান্ডারীর পোল এলাকায় বসবাস করছেন। প্রায় ৬০ বছর বয়সী আফাজ বেপারী মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী ছিলেন। তার সংসারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। তবে ছেলে-মেয়ে সবাই বিবাহিত।
আফাজ বেপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া এলাকার কালু মিয়ার গরু দেখভাল করার কাজ করতেন। সেখানে ৩ বছর কাজ করে চলে আসেন নিজ এলাকায়। রায়পুরে বিভিন্ন জায়গায় ইট ভাঙার কাজ করেন আরও ২ বছর।
এরপর দীর্ঘদিন তিনি ঢাকার চক-বাজারে লাল্লু বিহারীর মিষ্টি পানের দোকানে চাকরি করেন। সেখান থেকে ফিরে গত ৮ বছর ধরে নিজেই ব্যবসা করছেন। তবে তিনি বছরের ১২ মাসে ৩ ধাপে ৩ রকমের ব্যবসা করেন। বছরের তিন মাস পান, তিন মাস শরবত আর ৬ মাস পপকনের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
পানের দাম জানতে চাইলে আফাজ বেপারী জানান, সুপারি, নারিকেল, কিশমিশ, সেরি ফল, দারুচিনি, এলাচ, ধনিয়া, গুড়ামুড়ি ও কালোজিরাসহ ৪০ পদ দিয়ে একটি পান তৈরি করা হয়। এটি বিক্রি করা হয় ২০ টাকায়। ১০ টাকায় ৩০ পদ ও ৫ টাকায় ২০ পদের মশলা মিশিয়ে পান বিক্রি করা হয়।
আফাজ বেপারী জানান, ব্যবসাটি করতে গিয়ে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। এতে মনে শান্তি পাওয়া যায়। অনেকেই একবার পান খেয়ে আবার খেতে চান। এখানে এসেও একই ঘটনা ঘটেছে। একটি ছেলে পরপর ৫টি পান খেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা শহীদ উল্লাহ বিএসসি আমদেরকে বিভিন্ন বাড়ির উঠানে উঠানে গর্ত করে এর ওপর কলা পাতা, খড়, মাটি দিয়ে ভরাট করতে বলেছেন। সেখানে প্রবেশের জন্য অল্প একটু জায়গা রাখার জন্য বলা হয়েছে। গোলাগুলি হলে আমাদেরকে ছুটোছুটি না করে ওইখানে থাকার জন্য বলে দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সহযোগিতা করেছি। আর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে আমার একটি সনদও রয়েছে।’