বাঁশের খাঁচায় বড় হচ্ছে শিশু আল-হাশর
সাত বছর বয়সী আল-হাশরের বাবা-মা থেকেও নেই। সমবয়সীদের সাথে হেসে-খেলে স্কুলে যাওয়ার কথা তার। সেই বয়সে তাকে বন্দি করে রাখা হচ্ছে বাঁশের তৈরি খাঁচায়। শিশুটি জানে না তার কী অপরাধ, কেনই বা তাকে হিংস্র প্রাণীর মতো খাাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়।
খাঁচার মধ্যেই চলে তার খাওয়া দাওয়া ও খেলা ধুলা। সন্ধ্যা হলে খাঁচা থেকে বের করা হয় আল হাশরকে। এভাবেই গত এক বছর ধরে খাঁচার মধ্যে বেড়ে উঠছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের জোরগাছা পুর্বপাড়া গ্রামের সুজন ইসলাম ও ইতিমনি খাতুন দম্পতির সন্তান আল-হাশর।
আল-হাশরের বাবা-মা দুজনেই গার্মেন্টস কর্মী। দাম্পত্য কলহের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ না হলেও দেড় বছর ধরে পৃথকভাবে বসবাস করেন ঢাকায়।
সুজন ইসলামের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সুজন স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় একসাথে কাজ করতো। তাদের একমাত্র সন্তান আল-হাশর জন্মগ্রহণের পর কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মাথাসহ শরীর সব সময় গরম থাকত। মাঝে মধ্যেই শরীরে জ্বর দেখা দিত।’
‘শিশুটি বড় হওয়ার সাথে সাথে সমস্যা বাড়তে থাকে। একা ছেড়ে দেওয়া হলেই শক্ত কোনো বস্তুর সাথে মাথা আঘাত করতো। অন্যান্য শিশুদের থেকে সব সময় নিজেকে দূরে রাখত। এই অবস্থায় ঢাকা ও বগুড়ায় শিশুটির অনেক চিকিৎসা করানোর পরেও চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয় করতে পারেননি।’
এদিকে বছর দেড়েক আগে আল-হাশরের বাবা-মা আলাদা বসবাস শুরু করেন। এমতাবস্থায় আল-হাশরকে রেখে যাওয়া হয় গ্রামে দাদির কাছে। গ্রামে এসেও একই অবস্থা। ফলে বাড়ির উঠানে বাঁশ দিয়ে বড় আকারের খাঁচা তৈরি করে খড় বিছিয়ে সেখানে রাখা হয় আল-হাশরকে। খাঁচার মধ্যেই চলছে খাওয়া দাওয়া আর খেলা ধুলা। সন্ধ্যার পর খাঁচা থেকে বের করে ঘরে নিলে ঘুমিয়ে পড়ছে দাদির সাথে।
আলমগীর হোসেন আরও বলেন, ‘আল-হাশর দিন দিন বড় হওয়ার পাশাপাশি তার আচরণও হিংস্র হচ্ছে। তার দাদি ছাড়া অন্য কেউ কাছে গেলে তাকে আক্রমণ করে। সমবয়সী ছেলেদের সাথে খেলতে গেলেও তাদেরকে মারধর করে। সেই সাথে ইটের দেয়াল কিম্বা বড় গাছ দেখলেই মাথাদিয়ে আঘাত করে সেখানে। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে রাখা হয় খাাঁচাবন্দি করে।’
আল-হাশরের দাদি আজিরন বেওয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শিশুটির কষ্ট না পারছি দেখতে, আবার না পারছি সহ্য করতে। বাবা-মা থেকেও নেই। তারা কোনো খবর রাখে না। আমরা গরিব মানুষ, টাকার অভাবে ভাল কোনো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। সামাজের কেউ এগিয়েও আসে না অবুঝ শিশুটির চিকিৎসার জন্য। খাঁচায় বন্দি করে রাখা ছাড়া আমাদের আর কী করার আছে?’