সাংবাদিক পলাশ হত্যার এক বছর
সকাল বেলা ঝগড়ার শব্দ শুনে ঘুম ভাঙে শাহ মনির পলাশের। তখন আনুমানিক সকাল ৯টা। ঘরের বাইরে বের হয়ে দেখেন, তার বাবা মনির হোসেনকে ইট নিক্ষেপ করছে চাচাতো ভাইয়েরা। এক পর্যায়ে তিনি ইটের আঘাতে মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাটি দেখেই দৌড়ে গিয়ে বাবাকে মাটি থেকে তুলেছিলেন পলাশ।
হঠাৎ পেছন থেকে রড দিয়ে পলাশের মাথায় আঘাত করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অচেতন হয়ে হয়ে যান। এরপরও তার বুকে আঘাত করা হয় রড ও লাঠি দিয়ে। আর এই কাজটি করেন তার চাচাতো ভাই আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদ। আর এতে তার মাথা না ফেটে ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পলাশকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি রক্তবমি করলে তাকে নোয়াখালী হাসপাতালেও নেওয়া হয়। সেখান থেকেও চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঢাকা যাওয়ার পথে তিনি বেশ কয়েকবার রক্তবমি করেন।
জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কান্না জড়িত কণ্ঠে পলাশের বাবা মনির হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি হলেন ওই কালো দিনটির প্রত্যক্ষদর্শী।
এসব ঘটনা ঘটেছিল ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ঐদিন রাতে পলাশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় অপারেশনের কথা থাকলেও ভোরেই তিনি মারা যান। আজ শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) তার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
নিহত পলাশ সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মাছিমনগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক রূপবাণী পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের বিএ (ডিগ্রি) কোর্সের ফলপ্রার্থী ছিলেন।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পলাশের বাবা মনির হোসেন বাদি হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঐ মামলায় সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মাছিমনগর গ্রামের হাজী আক্তারুজ্জামানের ছেলে আবু ইউছুফ (৫০), আবু ছায়েদ (৪৫) ও ইউছুফের স্ত্রী ফয়েজুন নেছাকে (৪৫) আসামি করা হয়। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফয়জুন নেছাকে বাদ দিয়ে অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
একই বছরের ৩০ মার্চ গাজীপুর থেকে মামলার আসামি আবু ছায়েদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হন। সম্প্রতি মামলার প্রধান আসামি আবু ইউছুফ লক্ষ্মীপুর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।