সরকারি চাকরি করে বেতন পাচ্ছি না, এটা কেউ বিশ্বাস করে না
নীলফামারীর চিলাহাটি সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ যোগদান না করায় গত পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না প্রদর্শকসহ অন্যান্য কর্মচারীরা। এছাড়া বন্ধ হয়ে রয়েছে উন্নয়ন কার্যক্রম। এমনকি ব্যত্যয় ঘটছে প্রশাসনিক কার্যক্রমে।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চিলাহাটি সরকারি কলেজের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ইন্দ্রিস মিয়া। এখান থেকে পদায়ন পেয়ে দিনাজপুর মহিলা কলেজে যোগদান করেন তিনি। একই সময়ে অধ্যক্ষ হিসেবে চিলাহাটি সরকারি কলেজে পদায়ন করা হয় মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর সরকারি কলেজের অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার সরকারকে। সরকারি আদেশ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটিতে এ পর্যন্ত যোগদান করেননি তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী অধ্যক্ষের অনুমতি (স্বাক্ষর) সাপেক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সহ যাবতীয় ব্যয়ের জন্য টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে অধ্যক্ষ না থাকায় আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে না পারায় শিক্ষা উপকরণ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। যার প্রভাব পড়ছে পাঠদান প্রক্রিয়ায়।
অধ্যক্ষ না থাকায় যেমন পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে, তেমনি উন্নয়ন কার্যক্রমও থমকে দাঁড়িয়েছে। একাডেমিক ভবন স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধ আছে এবং ভবন মেরামত বাবদ দশ লাখ টাকা আসলেও কাজ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সময় মতো এগুলো করতে না পারলে বরাদ্দের টাকা ফেরত যাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
চিলাহাটি সরকারি কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রভাষক আখতারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, নীলফামারী জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কলেজটি অবস্থিত। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া রঞ্জিত স্যার এখানে আসতে চাইছেন না। চিলাহাটি কলেজটি এখন একজন সহযোগী অধ্যাপককে দিয়ে চালানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের কাছে এরকমও বলা হয়েছে। অতিদ্রুত স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে একজনকে পদায়ন করা দরকার। কারণ অধ্যক্ষ না থাকলে খুবই সমস্যা হয়, যা বলে বুঝাবার মতো নয়।
কলেজের প্রধান অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অক্টোবর থেকে প্রদর্শকসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪ জন কর্মচারীর বেতন বন্ধ রয়েছে। প্রিন্সিপাল স্যার না থাকায় কেউ বেতন তুলতে পারছি না।’
অফিস সহায়ক জুয়েল রানা বলেন, ‘ছোট চাকরি করি। আট সদস্যের পরিবার চলে এখানকার বেতনের ওপর। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। সরকারি চাকরি করে বেতন পাচ্ছি না, এটা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না।’
প্রসাশনিক শাখা সূত্রে জানা যায়, কলেজে ২৫ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছেন ১১ জন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ২৪ জনের স্থলে রয়েছেন ১২ জন এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নেই একজনও।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সরকার ফারহানা আক্তার সুমি বলেন, ‘সমসাময়িক সকল সংকট দ্রুত নিরসন করা হোক এবং আমাদের এই কলেজটিতে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা প্রয়োজন। চিলাহাটি ও আশপাশের এলাকার অনেক শিক্ষার্থী নীলফামারী-রংপুর গিয়ে কষ্ট করে পড়াশোনা করছে।’