অস্তিত্ব সংকটে কুমিল্লার ২০৩ খাল

  • জাহিদ পাটোয়ারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুমিল্লা, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অস্তিত্ব সংকটে কুমিল্লার ২০৩ খাল। ছবি: বার্তা২৪.কম

অস্তিত্ব সংকটে কুমিল্লার ২০৩ খাল। ছবি: বার্তা২৪.কম

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিপণ্য হলো ধান। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এ অঞ্চলের মানুষ বোরো আবাদ বেশি করে। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার প্রধান প্রধান খালগুলো খনন না করায় পলিমাটি জমে বেশির ভাগই ভরাট হয়ে গেছে। ভূমি অফিসের কাগজে-কলমে ২০৩টি খাল উল্লেখ থাকলেও দখলদার ও পলিমাটি জমার কারণে বাস্তবে অস্তিত্ব নেই ছোট-বড় অনেক খালেরই।

ভূমিদস্যুরা ড্রেজারের মাধ্যমে অধিকাংশ খাল ভরাট করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের খাল ও নালাগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলেই ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে উজান থেকে ভারতের পানি নেমেও ব্যাপক ক্ষতি হয় বোরো ফসলের।

বিজ্ঞাপন

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, বুড়িচংয়ে প্রায় দুই লাখ ৯৯ হাজার লোকের বসবাস। এর মধ্যে ৪৭ হাজার ১৮১টি পরিবারের লোকজন সরাসরি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এ বছর ৯ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন। তবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য যে নালা ও খাল রয়েছে সেগুলো খনন করা না হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক কৃষক বার্তা২৪.কমকে জানান, বুড়িচং বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের খালটি ভরাট হয়ে বর্তমানে নালায় পরিণত হয়েছে। এটি পয়াতের জলার পানি নিষ্কাশনের প্রধান খাল। খালটির দুপাশের বেশির ভাগ জায়গা ভরাট করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। এছাড়া রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর পশ্চিম পাড়া এলাকায় খাল ভরাট করে সাবেক মেম্বার জজু মিয়ার ছেলে বাড়ি নির্মাণ করেছে। পূর্ণমতি বাজার সংলগ্ন খালটি মসজিদ গেট পর্যন্ত ভরাট করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্ণমতি বাগান বাড়ি হতে কান্দারপাড় গুংগুর নদীর সঙ্গে সংযোগ খালটির অধিকাংশ ভরাট করা হয়েছে। জরইন গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের খালটিও ভরাট করে ফেলেছে স্থানীয় ভূমিদুস্যরা।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/20/1550640224102.jpg

স্থানীয় কৃষক রঞ্জু, কাদের ও জাব্বারসহ একাধিক ব্যক্তি বার্তা২৪.কমকে জানান, উপজেলার পয়াতের জলা এলাকায় ধান চাষ করে তারা খাবারের অধিকাংশ চাহিদা পূরণ করে থাকেন। কিন্তু উক্ত জলার পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল ও নালা রয়েছে তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে তাদের রোপণ কৃত ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এতে সারা বছর তাদেরকে কষ্টে দিন কাটাতে হয়।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের তহসিলদার মো. সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি অর্থের বিনিময়ে কিছু ভূমিদস্যুর সঙ্গে আঁতাত করার ফলে সদরের বিভিন্ন খাল ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণসহ ঘর-বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে মো. সফিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, তিনি এর সঙ্গে কোনো ভাবেই জড়িত নন।

বুড়িচং উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র বার্তা২৪.কমকে জানায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ছোট বড় ২০৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে ১১০টি, বাকশীমূল ইউনিয়নে ৩টি, বুড়িচং সদর ইউনিয়নে ২৬টি, পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নে ৩টি, ষোলনল ইউনিয়নে ৫টি, ময়নামতি ইউনিয়নে ৯টি, ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৬টি এবং মোকাম ইউনিয়নে ৩০টি খাল রয়েছে।

এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান বার্তা২৪.কমকে জানান, পলিমাটি জমে ভরাট হওয়া খালগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে। এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে খনন কাজের বাস্তবায়ন করা হবে। এডিসি রেভিনিউর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকল্প এলে খাল খনন শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছুই জানাতে পারেনি এই কর্মকর্তা।

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) মো. আসাদুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, মাটি জমে ভরাট হওয়া ১১টি খাল খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত এর বাস্তবায়ন হবে।