ভাষার মাস এলেই তাহের মজুমদারের কদর বাড়ে

  • জাহিদ পাটোয়ারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার/ ছবি: সংগৃহীত

ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার/ ছবি: সংগৃহীত

৫২’র ভাষা আন্দোলনের সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। কুমিল্লার যে ক’জন সাহসী বীর সন্তান ৫২’র ভাষা আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের অন্যতম কুমিল্লা সদর দক্ষিণের আলী তাহের মজুমদার।

রাজধানী ঢাকার বাহিরে কুমিল্লায় বাস করেন এই ভাষা সৈনিক। আন্দোলনের ৬৭ বছর পরও ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা থেকে বঞ্চিত দেশের সূর্য সন্তান ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আসলে তাঁর কদর কিছুটা বাড়লেও বছরের অন্য মাসের সময়টুকু একাকিত্বে কাটাতে হয় তাঁকে।

বিজ্ঞাপন

ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার জানান, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস আসলে প্রশাসন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা পেশাজীবী লোকজন খোঁজ নিতে আসেন। বছরের বাকি ১১ মাস তেমন আর কারো দেখা মিলে না।

তাহের মজুমার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মোঃ চারু মজুমদার এবং মাতা সাবানী বিবি। পরিবারে পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয়।

বিজ্ঞাপন

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায় মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৮ সালে। পাকিস্তানের জিন্নাহ সাহেব যখন ঢাকায় এসে বললেন, উর্দুই হবে এ দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তাৎক্ষণিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জিন্নাহর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান।’

তিনি বলেন, ‘১৯৪৮ সালে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিক থেকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে একটি মিছিল আসে। এ খরব শুনে যুবলীগ ও তমুদ্দীন মজলিসের কর্মীরা এবং কুমিল্লার স্কুল কলেজের ছাত্ররা পাল্টা মিছিল বের করেন। এই মিছিলে তারা উর্দু ভাষার বিপক্ষে প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি হয়। এতে বেশ ক’জন আহত হন।’

‘ফলে উর্দু ভাষার পক্ষে মিছিলকারীরা ঐ সময় কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা ও কুমিল্লায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রায় মিছিল হতো। আর এই আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ রূপধারন করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে।’

তাহের মজুমদার আরও বলেন, ‘অতীন্দ্র মোহন রায় এসে আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার ও বরকত সহ আরও অনেকে নিহত হয়েছেন। এই কথা শোনার পর আমিসহ অনেকে কুমিল্লার সকল স্কুল, কলেজের ছাত্রদেরকে ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরার আহ্বান জানাই।’

তখন রাজগঞ্জ রাণীর বাজারসহ পুরো কুমিল্লায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই স্লোগান নিয়ে তারা কঠিন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর এই আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে প্রধান ভূমিকায় সক্রিয় ছিলেন আজকের আলোচিত ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। আজ ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরও মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই ভাষা সৈনিক।

আলী তাহের মজুমদার ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানান, যারা ঢাকাসহ সারা দেশে ভাষা আন্দোলনের জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন, তারা অনেকেই একুশে পদক অর্জন করেন। কিন্তু তিনি ঢাকার বাহিরের মফস্বলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সন্তান হওয়ায় এই পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষ বসন্তে শত বছর বয়সে পৌঁছে গিয়েছি। মনে হয় মরার আগে বীরোচিত একুশে পদক আমার ভাগ্যে জুটবে কিনা জানি না। এ পর্যন্ত অনেক সরকারকে ক্ষমতায় দেখেছি কিন্তু কোনো সরকারই আমার দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি।’