সুখদহ খাল ভরাট হওয়ায় সুখে নেই জেলে পরিবার

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সারিয়াকান্দির সুখদহ খালে তৌড়াজাল দিয়ে মাছ ধরছেন ফুলবাড়ী মালোপাড়া গ্রামের সহাদেব চন্দ্র বর্মন

সারিয়াকান্দির সুখদহ খালে তৌড়াজাল দিয়ে মাছ ধরছেন ফুলবাড়ী মালোপাড়া গ্রামের সহাদেব চন্দ্র বর্মন

পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সুখদহ খাল থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাত অসংখ্য জেলে পরিবার। সুখদহ খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সুখে নেই জেলে পরিবারগুলো। খালে পানি নেই মাছও নেই।  ফলে জেলে পরিবারের সদস্যরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। যারাও পেশা ধরে রেখেছেন তাদের সংসার চলে টানাপোড়েনের মধ্যে।

এদেরেই একজন ফুলবাড়ি মালো পাড়া গ্রামের সহাদেব চন্দ্র। তিনি এখনও ধরে রেখেছেন বাপ দাদার পেশা মাছ ধরা। কিন্তু খালে বিলে মাছের আকাল। পাঁচ সদস্যের সংসার এখন আর চলে না মাছ বিক্রির টাকায়। শুধু সহাদেব চন্দ্রই নয় এই মালোপাড়া  (জেলেপাড়া) গ্রামের বসবাস করা ২৫ ঘর জেলে পরিবারের একই অবস্থা।

বিজ্ঞাপন

ফুলবাড়ি জেলেপাড়া, নারচী জেলে পাড়ার সদস্যরাও এখন নিজ পেশায় টিকে থাকতে পারছেন না। নারচী মালোপাড়ার সুবোধ পরিতোষ বলেন, এই সুখদহ খালের মাছ বিক্রি করেই জেলে পরিবারগুলো সুখে শান্তিতে বসবাস করত। আর এখন এই সুখদহ খাল জেলে পরিবারগুলোর সুখ কেড়ে নিয়েছে। জেলে পরিবারের শারীরিক ভাবে সামর্থবান নারী ও পুরুষরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় মাটি কাটা থেকে শুরু করে কৃষি জমিতে কাজ করছেন পেটের তাগিদে। আর যারা শারীরিক শ্রম দিতে পারছেন না তারাই জাল নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ান খালে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে। কেউ ফিরেন খালি হাতে আবার কেউ বা কিছুটা মাছ পেলেও তা বিক্রি করে পেটের ভাত জোটে না।

এই অঞ্চলের মানুষ জানান,  পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী ও ধুনট উপজেলার বিভিন্ন খাল বিলে একসময় ছিল দেশীয় প্রজাতির  মাছের আবাসস্থল। এসব খালে সারা বছর পানি থাকত। ফলে মাছের অবাধ বিচরণের কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ দেশীয় মাছ বংশ বিস্তার করত। এই অঞ্চলের খাল বিল থেকে ধরা দেশীয় প্রজাতির মাছ ছিল সুস্বাদু।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও বর্ষাকালে উজানের নেমে আসা  ঢলের পানিতে যমুনা নদীর বড়-বড় রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, আইড়, বাইম ও বাঘাইড় সহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় দেশীয় মাছ আশ্রয় নিতো এসব খালে। শীত মৌসুম থেকে এসব মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতো স্থানীয় জেলেরা।

প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সুখদহ খালে মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হতো দেশের বিভিন্ন জেলায়। শুধু সুখদহ খালই নয়, অন্যান্য খাল ও জলাশয়গুলোর একই অবস্থা। ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যায়। ফলে আগের মত  মাছ পাওয়া যায় না এসব খাল ও জলাশয়গুলোতে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা মৎসজীবী সমিতির সভাপতি গোফ্ফার ফকির  বার্তা২৪.কমকে বলেন, কি বলবো আর আমাদের কথা, যমুনার গর্ভে জমি-জমা হারিয়ে ২২ বছর পূর্ব থেকে মাছ ধরার পেশায় যুক্ত হয়েছি। কিন্তু নদীতে এখন ঠিকমত মাছ না পেয়ে আমরা নিদারুণ কষ্টে পড়েছি। বিশেষ করে বংশ পরম্পরায় জেলে পরিবারের কষ্টটা আরো বেশি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোর্শেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২ হাজার ৮১ তালিকা ভুক্ত মৎসজীবী রয়েছেন।  বর্তমানে নদীর নাব্যতা সহ বিভিন্ন কারণে মাছের সংকট অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে  নদী এবং খাল বিলে খাঁচা পদ্ধতিতে দেশীয়  প্রজাতির মাছ চাষ করে মৎসজীবীরা একদিকে যেমন সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরাতে পারেন অপর দিকে দেশীয় জাতের মাছের সংকট মেটাতে সক্ষম।

তবে আশার বানী শুনিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফ আহম্মেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন খালও জলাশয় গুলোতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে  জেলার ৮টি উপজেলায় ৯টি খাল খনন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ কুতুবপুর খাল খনন শুরু হয়েছে। সুখদহ খালটিও খনন কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এসব খাল খনন হলে সারা বছর সেখানে পানি থাকবে। জেলোরা আবারো সেখানে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।