প্রতিদিন নিজেকে বিক্রি করতে দাঁড়িয়ে থাকে রহিমরা
ভোরের সূর্যটা তখনো ঠিকমতো উঠেছিলো না রঙিন আকাশে। কথা হচ্ছিল রহিম মিয়ার সাথে। ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে অভাবের সংসার তার। জীবিকার টানে বছরের প্রতিদিন ভোরে তিনি গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে আসেন শহরে। হাতে কোদাল আর ঝুড়ি নিয়ে বড় রাস্তার পাশে তিনি দাড়িয়ে থাকেন পণ্য হয়ে। রহিমের মতই আরো অনেকেই গ্রাম থেকে দিনমজুর কাজের খোঁজে আসে শহরে। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় মানুষ বেচাকেনা। প্রতিদিন ৪০০/৫০০ টাকায় এসব মানুষ বিক্রি হয় পণ্য হিসেবে। একটি কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর যেদিন কাজ হয় না সেদিন খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয় মানুষরূপী এসব পণ্যের।
একটা সময় ছিল যখন সমাজে দাস হিসেবে মানুষকে বিক্রি করা হতো। কালক্রমে সেই প্রথা উঠে গেলেও আধুনিক যুগে মানুষ এখনও পণ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র নামটিই হয়েছে পরিবর্তন। অভাবের সংসারে দুই বেলা ভাতের জন্য এসব মানুষ পণ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। শীতের কুয়াশা ঢাকা ভোরে চাদর মুড়িয়ে রাস্তার পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে অনিশ্চিত কাজের আঁশায়। আর দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অল্প টাকায় এসব শ্রমিককে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ।
শহরের শহীদ হাসান চত্বরে ভোর হতেই প্রতিদিন দেখা মেলে একদল মানুষের। এসব মানুষ শ্রমিকের বেশে পণ্য হয়ে আসে শহরের রাস্তায়। বিভিন্ন নাম থাকলেও এসব মানুষ সবার কাছে শ্রমিক নামেই পরিচিত বেশী। গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ আসেন এখানে কাজের খোঁজে। নানা পেশার মানুষের এ যেন এক মিলনমেলা। শ্রম বিক্রির এই বাজারে অনেকেই কিনতে আসে দিনমজুর শ্রমিক। এসব মানুষের প্রতিদিনই মেলে না কাজের নিদিষ্ট খোঁজ।
শহরে শ্রম বিক্রি করতে আসা সুরুজ মিয়া বলেন, গ্রাম থেকে শহরে কাজ করে বাড়তি কিছু বেশী টাকা পাওয়া যায় তাই শহরে প্রতিদিন শ্রমিক হয়েই আসি। আমার মতো গ্রামের অনেকেই আসে শ্রম বিক্রি করতে। এখানে চুক্তি মোতাবেক একজন শ্রমিককে বেলা ১ টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। অনেকে আবার বাড়তি কিছু টাকার আশায় বিকেল পর্যন্তও কাজ করে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সুজনের সভাপতি (সুশাসনের জন্য নাগরিক) অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন দিনমজুর মানুষের প্রতিদিনের চাহিদা খুবই কম। সামান্য কিছু টাকার জন্য সারাদিন কাজ করতে চাই এসব মানুষ। তবে কষ্ট হলেও সত্যি এসব মানুষকে সমাজের এক শ্রেণির শিক্ষিত মানুষ পণ্য হিসেবে মনে করে। যারা মানুষকে মানুষ না ভেবে পণ্য ভেবে থাকে তাদের সমাজের শিক্ষিত অসুস্থ মানসিকতার কীটপতঙ্গ বলে মনে করেন তিনি।