‘ছবি তুলে লাভ নাই, ইঞ্জিনের ভাড়া দিয়া উঠছি’

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘ছবি তুলে লাভ নাই, ইঞ্জিনের ভাড়া দিয়া উঠছি’। ছবি: বার্তা২৪.কম

‘ছবি তুলে লাভ নাই, ইঞ্জিনের ভাড়া দিয়া উঠছি’। ছবি: বার্তা২৪.কম

ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩টি রেলপথে টাকার বিনিময়ে ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনের ওপরে যাত্রী তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির শঙ্কা থাকলেও কেউই যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে কিংবা ইঞ্জিনে উঠতে বাধা দেয় না। উল্টো ট্রেনের চালক ও স্টাফরা তাদের কাছ থেকে টাকা নেন।

এসব ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী বহনের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।

বিজ্ঞাপন

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে প্রতিদিন ৩টি রুটে আন্তনগর, লোকাল ও মেইল সহ ৩২টি ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ট্রেনে চড়ে যাতায়াত করে। এই রেলপথে প্রতিদিন ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে ঝুঁকি নিয়ে শিশু, নারীসহ শত শত যাত্রী চলাচল করছে। রেলওয়ের ময়মনসিংহ, জারিয়া, শ্যামগঞ্জ, গৌরীপুর, বিসকা, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা সহ বিভিন্ন স্টেশন থেকে যাত্রীরা অবাধে ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

সরেজমিনে সোমবার (৪ মার্চ) গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ৪টি ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে যাত্রী যাতায়াতের সত্যতা পাওয়া যায়। দুপুর ১টায় গৌরীপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী মোহনগঞ্জ লোকাল ট্রেনটি প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন যাত্রী ট্রেনের ছাদে বসে আছে। আর ইঞ্জিনের সামনে বসে আছে বেশ কয়েকজন শিশু যাত্রী। তাদের একজন হলেন- যাত্রী আলী হোসেন (১১)। তিনি বলেন, ‘টেকা ছিল না, টিকিট করি নাই। তাই ইঞ্জিনে উইঠ্যা মইসিং যাইতাছি।’

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/04/1551704433355.jpg

নেত্রকোনার জারিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১টা ১২ মিনিটে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ট্রেনের ইঞ্জিন ও ছাদে যাত্রী রয়েছে। পাশাপাশি গৌরীপুর স্টেশন থেকেও বেশ কয়েকজন যাত্রী গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠে বসেছে। এ সময় ছবি তুলতে গেলে অনেকে ইঞ্জিন থেকে নেমে পড়ে।

ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ভৈরবগামী ঈশা খান এক্সপ্রেস দুপুর ১টার পর গৌরীপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। সরেজমিনে দেখা যায় বগিতে তেমন ভিড় না থাকলেও বেশ কয়েক যাত্রী ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসে আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘টিকিট করলে টেকা বেশি লাগে, আবার সিট পাওয়া যায় না। আর ইঞ্জিনে বইয়্যা গেলে কোনো ঝামেলা নাই। ট্রেইনের লোকজনরে অল্পকিছু টেকা দিলেই অয়।’

এদিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নেত্রকোনাগামী মহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে গৌরীপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। সেখানে দেখা যায়, ওই ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে যাত্রী রয়েছে। ছবি তুলতে গেলে কয়েজন যাত্রী কটূক্তি করে বলেন, ‘ছবি তুলে লাভ নাই, ইঞ্জিনের ভাড়া দিয়া উঠছি।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রী বহনের কারণে গৌরীপুরে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গত বছরও গৌরীপুর স্টেশনে ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তারপরেও রেলওয়ের কিছু অসাধু লোকজন টাকার বিনিময়ে ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রীদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এসব অসাধু লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/04/1551704454806.jpg

গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ট্রেন যখন স্টেশন ছাড়তে শুরু করে তখন অনেক যাত্রী লাফিয়ে উঠে যায়। ওই সময় আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে যাত্রীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেব। আর টাকা নিয়ে ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রী তোলা হয় এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।’

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জহুরুল ইসলাম জানান, ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রী বহন সম্পূর্ণ বেআইনি। রেলওয়ের কোনো স্টাফ টাকার বিনিময়ে ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রীদের ভ্রমণের সুযোগ করে দিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিভিন্ন উৎসব ও ছুটিতে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রীরা উঠে বসে। তখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না।