ভিক্ষার অর্ধেক যায় ছেলের নেশায়
আলেয়া বিবি। বয়স ৭০ অতিক্রম করেছে। শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষা করেন তিনি। সারাদিনে ভিক্ষা করে পান ১২০/১৫০ টাকা। এই টাকার কিছুটা অংশ দিয়ে কেনেন সংসারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।
আর বাকি কয়েকটি টাকা শাড়ির আঁচলে গিট বেঁধে নিয়ে যান বাড়ি। আবার প্রতিদিনই বাড়ি ফেরার পথে বিস্কুট বা কেক নিতেও ভুলেন না তিনি। তবে তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল প্রতিদিনই তিনি বিস্কুট বা কেক তার নিজের জন্য নেন না। নেন তার নাতির জন্য।
সম্প্রতি শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে কথা হয় আলেয়া বিবির সঙ্গে। তিনি জানান, রেলস্টেশন এলাকার বস্তিতেই থাকেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়। যুদ্ধের কয়েক বছর পর তার একমাত্র ছেলে আব্দুল হামিদ জন্ম নেয়। তার বয়স যখন ৫০ বছর তখন স্বামী কদ্দুছ মিয়া তাকে ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে।
এরপর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে পড়েন বিপাকে। ২০ বছর বয়সী ছেলে থাকার পরও মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। এরই মধ্যে ছেলে নেশাখোরদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি শুরু করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশিরা বলল ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিতে। তাতে সে ঠিক হয়ে যেতে পারে। লোকজনের কথায় বিয়ে করিয়েও শান্তি পাইনি। বিয়ের পর কয়েকদিন ভালো চলাফেরা করলেও মাসখানেক পর আবার সে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। বছরখানেক পর তার এক নাতির জন্ম হয়। কিন্তু তার মুখের দিকে না তাকিয়ে সে তার অপকর্ম চালিয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে মারধর করে। অনেকবার স্থানীয় লোকজন তাকে পুলিশে দিতে আলেয়াকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সে তার ছেলেকে পুলিশে দিতে রাজি নন। উল্টো প্রতিবেশিদের ওপর চটেন তিনি।
আলেয়া বিবি বলেন, ‘এখনও ছেলে নেশা করে বাড়ি ফেরে। তিনজনের সংসার আমি ভিক্ষা করে টানছি। আমার ছেলের বউ চা বাগানে কাজ করে। শুধু সংসার চালানো না। ছেলের নেশার টাকাও দিতে হয় আমাদের। না দিলে চুরি-ডাকাতি করে।’
সরকারি কোনো সুবিধা পান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিধবা ভাতা পাই। কিন্তু তবুও সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। আর সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকি আমি মরলে আমার নাতি ও পুত্রবধূর কি হবে। বেঁচে থাকতে যতি ছেলেটাকে পথে ফেরাতে পারতাম তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।’
তিনি বলেন, ‘কপালের দোষে আমি ভিক্ষা করছি। না হলে এমন একটা ছেলে থাকতে কী আমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা করতে হয়। আমার ছেলের বিরুদ্ধে খারাপ কিছু লিখবেন না বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।’