যমুনায় চরাঞ্চলের একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ি

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঘোড়ার গাড়ি করে ফসল নিয়ে যাচ্ছে কৃষক / ছবি: বার্তা২৪

ঘোড়ার গাড়ি করে ফসল নিয়ে যাচ্ছে কৃষক / ছবি: বার্তা২৪

যমুনা নদী বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের শুষ্ক মৌসুমে একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ি। কৃষকের কষ্টে ফলানো ফসল বাজারজাত করতে যমুনা নদীর পার হওয়ার আগেই কয়েক কিলোমিটারের বালুচর পাড়ি দিতে ঘোড়ার গাড়ির কোনো বিকল্প নেই। শুধু মালামাল পরিবহনে নয় মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রেও ঘোড়ার গাড়ি চর এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বর্ষার মৌসুমে চর পানিতে ডুবে থাকায় চরবাসীর মালামাল পরিবহন এবং যাতায়াত নৌকা ব্যবহর করতে হয়। কিন্তু শীত মৌসুমের শুরু থেকে নদীতে পানি কমতে থাকলে কষ্টের শেষ থাকে না। শীত মৌসুম থেকে বর্ষার আগ পর্যন্ত চরের উর্বর জমিতে ধান, গম, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি ব্যাপক চাষ হয়। চরে চাষ করা ফসল জমি থেকে ঘরে আনতে কিংবা হাটে নিয়ে যেতে  চর এলাকায় অন্য কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না। এ কারণে অনেকেই ঘোড়া কিনে বাড়ির গরু ছাগলের সাথে পালন করে। শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার সাথে গাড়ি লাগিয়ে মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়।
          
সারিয়াকান্দি ছাড়াও বগুড়া জেলার যমুনা নদী বেষ্টিত সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৮০টি চরে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। বিশেষ করে সারিয়াকান্দি উপজেলার শিমুল তাইড়, চর হরিনাথ, ধারাবর্ষার চর, ময়ুরের চর, কাকালিহাতা চর, বাটির চর এলাকায় ভ্যান রিকশা চলাচল করার মতো কোন রাস্তা নেই। এসব চর এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক জরুরি রোগী হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ময়ুয়ের চরের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন,     চরের জমিতে প্রতি বছরই ব্যাপক ফসল হয়। কিন্তু শ্রমিক দিয়ে এসব ফসল ঘরে আনা কষ্টকর। ধু-ধু বালু চরে ফসলের বোঝা কাঁধে নিয়ে কেউ হাঁটতে পারে না। এ কারণেই দিন দিন চরাঞ্চলে ঘোড়া কেনার প্রবণতা বেড়ে গেছে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘যাদের জমি বেশি তারা নিজেরাই বাড়িতে ঘোড়া পালন করে আবার অনেকে ঘোড়া কিনে ফসল পরিবহনের কাজে গাড়িসহ ভাড়া দেয়। ঘোড়ার গাড়িতে অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে খরচও অনেক কম। এভাবে চরের মানুষ জমি থেকে ফসল ঘরে উঠায়, আবার সেই ফসল হাটে আনতে কয়েক কিলোমিটার চর পাড়ি দিতে হয় ঘোড়ার গাড়িতে।’

হাসনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, বাড়ি ঘর নদীতে বিলীন হওয়ার পর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পশ্চিমে বসত বাড়ি করেছেন।  কিন্তু চরে তার জমি জমা রয়েছে। সেখান থেকে নদী পার করে ফসল ঘরে আনতে নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়ি দুটোই প্রয়োজন। এ কারণে তিনি নিজেই একটি ঘোড়া কিনে বাড়িতে রেখেছেন।
    
ময়ুরের চরের বাসিন্দা মহাতাব উদ্দিন, আফজাল হোনে ও সিরাজ মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, গত ১০ বছরে চরের জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। রাস্তা ঘাটও হয়েছে চরের অনেক এলাকায়। কিন্তু জমি থেকে ফসল ঘরে আনতে কষ্টের শেষ নাই।

তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানি আর পানি । আর শুষ্ক মৌসুমে ধু-ধু বালু চর।