আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ!

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পাবনা, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

উপজেলা নির্বাচন, ছবি: বার্তা২৪

উপজেলা নির্বাচন, ছবি: বার্তা২৪

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে পাবনার ৮ টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সোমবার (১৮ মার্চ)। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা শেষ। ভোট গ্রহণে সকল উপকরণ স্ব স্ব উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে বিতরণ করা হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা সকালের।

এদিকে এ জেলার ৯ টি উপজেলা হলেও সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এছাড়াও জেলার সুজানগরে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ উপজেলায় দুইটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পাবনা সদর, সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া এ ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭ টি উপজেলায় চেয়ারম্যানপদে ২৬ জন প্রার্থী রয়েছেন ভোটযুদ্ধে। এ ছাড়া ৮টি উপজেলায় পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ৪৯ জন এবং ৩০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়েছেন। এবারের নির্বাচনে পাবনার ৮টি উপজেলার মধ্যে আটঘরিয়া উপজেলায় ১১ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান এবং ঈশ্বরদী উপজেলায় ৭ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন। ইতোমধ্যে, আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারোফ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে গোলাম আজম শাওয়াল বিশ্বাস ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামসুন নাহার রেখা। এছাড়া সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন শাহীনুজ্জামান শাহীন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার নৌকা প্রার্থীর অভিযোগ যে, স্থানীয় সংসদ সদস্য দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। অন্যদিকে স্থানীয় এমপির প্রভাবে নৌকা দলীয় প্রার্থীকে সহযোগিতা করছেন না তৃণমুলের দলীয় নেতা কর্মীরা। রয়েছে পক্ষপাতের অভিযোগ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ ভোটাররা চাইছেন ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। অন্যদিকে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা আশা করছেন জনসাধারণ।

ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদে নৌকা প্রতীকের প্রাথী নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘দল আমাকে প্রার্থিতা দিয়েছে। দলীয় প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করছি।’

স্থানীয় সাংসদ অনুসারী মকলেছুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আমি তৃণমুলের প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরেই দলের জন্য নিবেদিত রয়েছি। আমার সমর্থকদের দাবির প্রেক্ষিতে আমাকে নির্বাচন করতে হচ্ছে।’

আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন পান্না পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। তার প্রতিদ্বন্ধি হয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইশারত আলী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতনের ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তানভির ইসলাম।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সাথে মেয়র পুত্রের হবে ভোট যুদ্ধ। মাঝখান দিয়ে গোল দিতে পারেন ইশারত আলী। পান্নার দাবী দলীয় প্রার্থী হলেও দলের একটি বৃহৎ অংশ তার পক্ষে কাজ করছে না।

অন্যদিকে তানভিরের দাবি, দল প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেছে। চেয়ারম্যান হিসেবে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর দখল করেছে। সেটিকে পুনরুদ্ধার করতেই তৃণমূল চাহিদায় আমি প্রার্থী হয়েছি।’

চাটমোহর উপজেলায় দলীয় প্রার্থী খবিরের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হামিদ মাস্টারের ভোট যুদ্ধ হবে। সদ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও হামিদ মাস্টার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এমনইভাবে জেলার ফরিদপুর, ভাঙ্গুরা, বেরা, সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী।

এদিকে, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, ৮টি উপজেলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় তিনিই রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন। অন্যদিকে ফরিদপুর, বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাফিউল ইসলাম রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কোন ধরণের নাশকতা, আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে ৩৮ জন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৭ প্লাটুন অর্থাৎ ৩৯৫ জন বিজিবি সদস্য, পুলিশের ১ হাজার ৭৩২ সদস্য ও আনসার ভিডিপির ৬ হাজার ২৭২ জন সম্পৃক্ত থাকবেন। এছাড়াও র‌্যাবের টহল অব্যাহত থাকবে।

তথ্যমতে, পাবনার ৯টি উপজেলায় ৬৬৭টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭৬৫ জন। তার মধ্যে ৮টি উপজেলার ৫২৩ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে অংশ নেবেন ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ২৯ হাজার ৪২৭ এবং মহিলা ভোটার ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৬ জন।