টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম
'লুটের টাকা নিয়ে নিউজ করার দরকার নাই'
ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্টেশনের বুকিং সহকারী ও স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে লুটের টাকা নিয়ে খবর সংগ্রহ করতেও নিষেধ করেন স্টেশন মাস্টার।
আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছে কালোবাজারে। আর লোকাল ট্রেনের টিকিটে স্টেশন কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় যাত্রীরা।
অপরদিকের গৌরীপুর স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো যাত্রাবিরতি করলে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা টিকিট ছাড়াই টাকা নিয়ে যাত্রীদের ট্রেনে তুলে দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্টেশনের রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ গোলাম মাওলা বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এরমধ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্টেশনের বুকিং সহকারী মহসীন রেজার বিরুদ্ধে টিকিট বিক্রির ৭ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ উঠে। পরের দিন ১ লা মার্চ বিষয়টি জানাজানি হলে মহসীনের পরিবার স্টেশন মাস্টার ও প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ফেলেন।
স্থানীয়রা জানান, ক্রিকেট খেলায় জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে ট্রেনের টিকিট বিক্রির ৭ লাখ টাকা লুট করে মহসীন। এ বিষয়ে মহসীন রেজার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সরজমিনে স্টেশন মাস্টার আব্দুল রশিদের কার্যালয়ে গিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘টিকিট বিক্রির লুট হওয়া ৭ লাখ টাকা মহসীন ফেরত দিয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে টাকা লুটের ঘটনায় নিউজ করার দরকার নেই। আমি যেহেতু ইনচার্জ, তাই নিউজ করলে আমার একটু সমস্যা হবে। আর আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেনের টিকিট দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।’
স্টেশন মাস্টারের সাথে কথা বলার সময় একজন কালোবাজারি তার কার্যালয়ে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের সামনে টিকিট চায়। এসময় স্টেশন মাস্টার ও বুকিং সহকারী জহির রায়হান কৌশলে ইশারায় কালোবাজারিকে বের করে দেয়।
জানা গেছে, গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে তিন রুটে প্রতিদিন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল সহ ৩২টি ট্রেন চলাচল করে। গৌরীপুর থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন হাওর ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট (শোভন) ১৪৫ টাকা হলেও কালোবাজারে তা কিনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়।
গৌরীপুর থেকে চট্রগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের (শোভন) ৩২০ টাকার টিকিট ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কমিউটার ট্রেন বলাকা ও মহুয়া ট্রেনের টিকিট অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রিরও অভিযোগ আছে।
গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, ‘দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি ও কালোবাজারি বন্ধে আমরা মানববন্ধন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কিছুদিন আগে কাউন্টার থেকে ঢাকাগামী বলাকা ট্রেনের ৭৫ টাকা টিকিট ১শ টাকা রেখেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমি চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য কাউন্টারে গেলে জহির ভাই বলেন টিকিট নেই। কিন্তু পরে জহির ভাই দ্বিগুণ মূল্যে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করেন। আমি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আমার টিকিট না, অন্যের টিকিট আমি বিক্রি করে দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুকিং সহকারী জহির রায়হান বলেন, ‘টিকিট নিয়ে একটু ভুল বোঝাবোঝি হয়েছে। আমরা বেশি দামে টিকিট বিক্রি করি না।
স্টেশনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তার (ডিসিও) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি স্টেশনে থাকেন, তাহলে স্টেশনকে মাস্টারকে ফোনটা ধরিয়ে দিন। আর এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে চাইলে ঢাকা অফিসে আসেন।’
টাকা লুটের তদন্তের সর্বশেষ কি পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’
তবে বার্তা২৪.কমের প্রতিনিধির কাছে তিনি (ডিসিও) তার নাম বলতে রাজি হননি।