ঝুড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী পাঁচ হাজার নারী
গ্রামের নাম হাপুনিয়া। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ঝুড়ি তৈরি করে এই গ্রামের পাঁচ হাজার নারী এখন স্বাবলম্বী। ছন আর তালপাতা দিয়ে তারা তৈরি করে থাকেন রকমারি ডিজাইনের ঝুড়ি-ডালা ছাড়াও নিত্য ব্যবহারিক জিনিসপত্র। আর এসব তৈরি করে নারীরা মাসে বাড়তি আয় করেন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। ফলে টাকার জন্য স্বামী-সন্তানের কাছে হাত পাততে হয় না কাউকে।
সন্তানের লেখাপড়া, সৌখিন জিনিস, কসমেটিকস, জামা-কাপড় ছাড়াও সংসারে ব্যবহার্য অনেক কিছুই নারীরা তাদের আয়ের টাকায় কিনে থাকেন। ফলে প্রতিটি ঘরেই ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।
হাপুনিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতেই নারীরা কেউ বসে নেই। সংসারের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে ছন আর প্লাস্টিকের সুতো দিয়ে নিপুন হাতে তৈরি করছে ঘরের ব্যবহারিক তৈজসপত্র। এসব নারীদেরকে ছন আর প্লাস্টিকের সুতোর পাশাপাশি কাজের অর্ডার দিচ্ছে ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাপুনিয়া গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি করা জিনিসপত্র রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৬৬টি দেশে।
হাপুনিয়া গ্রামের বিউটি বেগম, আয়েশা খাতুন, নার্গিস বেগম, মঞ্জুয়ারা বেগমসহ আরও কয়েকজন নারী জানান, শুধু হাপুনিয়া নয়, পার্শ্ববর্তী হাটগাড়ি, তালপট্টি, বনমরিচা, মহিপুর, মমিনপুর, জামতলা, জামুন্নাসহ পুরো শেরপুর উপজেলা জুড়ে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ছন আর তালপাতা দিয়ে হস্ত শিল্পের কাজ।
হাপুনিয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মোবারক উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে জানান, ৩৫ বছর আগে ঢাকা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা হাপুনিয়া গ্রামে এসে দুইজন নারীকে ছন আর তালপাতা দিয়ে ঝুড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। ওই দুই নারীর মাধ্যমে হাপুনিয়া গ্রামে হস্ত শিল্পের প্রসার ঘটে। যা এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।
হাপুনিয়া গ্রামে বিডি ক্রিয়েশনের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার ফরিদ হাসান দাবি করেন, ৩৫ বছর আগে তাদের প্রতিষ্ঠানই প্রথম হাপুনিয়া গ্রামে নারীদের হস্ত শিল্পের উপর প্রশিক্ষণ দেয়। বার্তা২৪.কমকে ফরিদ হাসান জানান, তাদের মাধ্যমেই এখন হাপুনিয়া গ্রামে পাঁচ হাজার নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। বিশ্বের ৬৬টি দেশে তাদের প্রতিষ্ঠান এসব হস্ত শিল্পের সামগ্রী রপ্তানি করে থাকে।