মিতুর আঁকা ছবি কথা বলে!
পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ধূলাউড়ি ঘোষপাড়া গ্রামের মিতু একজন বাকপ্রতিবন্ধী। তবে সে অসাধারণ মেধাবী। ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ তার প্রবল। তার আঁকা ছবি যেন বাস্তবের কথা বলে। যদিও ছবি আঁকায় তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। যতটুকু শিখেছে তার সবই নিজের চেষ্টায়।
জানা গেছে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়সহ নানা গুণীজনের ছবি এঁকে যাচ্ছে মিতু। যা দেখে অবাক হচ্ছেন সবাই। দরিদ্র কৃষক কুটিশ্বর ও গৃহিণী সুমিত্রা রানী দাস দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মিতু। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় আইসিটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয় সে। এ বছর আবারও ওই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে সে। বড় বোন রেপা রানী দাসও বাকপ্রতিবন্ধী। অনেক কষ্টে তার বিয়ে দিয়েছে বাবা-মা। মাস্টার্স পাসের পর মেজ বোন রিতার বিয়ে হয়ে যায়। আর ভাই রিপন কুমার দাস ঢাকার একটি কলেজে পড়াশুনা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভাব অনাটনের সংসারে মিতুর খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হয় দরিদ্র পিতা-মাতার। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উঠানে বসে আর্ট পেপারে ছবি আঁকছে মিতু। কথা বলার প্রবল আকুতি তার! তার বোঝানোর ক্ষমতা বা দক্ষতা সাধারণ অন্য মেয়েদের চেয়েও বেশি। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ছবি দেখে নিজে নিজেই আঁকা শেখে মিতু। সংসারে অভাব থাকলেও মেয়ের আগ্রহ ও প্রতিভা দেখে বাধা হননি বাবা-মা।
মিতুর বাবা কুটিশ্বর ও মা সুমিত্রা রানী দাস বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বড় মেয়ের পর ছোট মেয়েও (মিতু) বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ায় ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু বড় হওয়ার পর তাকে (মিতু) স্কুলে ভর্তি করে দেই। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মিতু ছবি দেখে হুবহু আঁকতে শুরু করে। ভেবেছিলাম প্রাইমারি পাস করলে আর পড়াবো না। কিন্তু মেয়ের প্রবল আগ্রহ দেখে বাধা দেইনি।’
তারা আরও বলেন, ‘মেয়ের ভাতার কার্ডের জন্য বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যানকে বলেছি। সমাজসেবা অফিসেও গিয়েছি। কিন্তু কোথাও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।’
চাটমোহর শিল্পকলা একাডেমির অঙ্কন শিক্ষক মানিক দাস বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বাকপ্রতিবন্ধী মিতুর আঁকা চিত্রকর্ম দেখে আশ্চর্য হয়েছি। এটা ঈশ্বর প্রদত্ত ব্যাপার। না শিখেই মিতুর মধ্যে যে প্রতিভা আছে এর আগে কোথাও দেখিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মিতু অনেকদূর যেতে পারবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমারকে মিতুর বিষয়টি জানানো হলে তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বাকপ্রতিবন্ধী মিতুর চিত্রকর্ম আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার জন্য ভাতার কার্ড করে দেওয়ার পাশাপাশি, মিতুর সুপ্ত প্রতিভা যেন বিকশিত হয় সে ব্যবস্থাও করা হবে।’