তালিকায় নাম নেই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার
১৯৭০ সাল, বয়স তখন ২০/২১। টগবগে এক যুবক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা যুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন করে ফেরেন নিজ গ্রামে। যুদ্ধ চলাকালীন সময় পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে হারান একটি পা।
কিন্তু স্বাধীনতার পর অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সাজলেও তার ভাগ্যে জুটেনি কিছুই। বর্তমানে অভাব অনটনের সংসারে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছেন এই বীর যোদ্ধা।
বলছিলাম, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ইদ্দিস উল্লাহর কথা। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদ থাকলেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইদ্দিছ উল্লাহর নাম নেই বর্তমান কোন তালিকায়। তিনি নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের পরকুল গ্রামের বাসিন্দা মৃত জলিল উল্লাহর ছেলে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে যান ইদ্দিছ উল্লাহ। তিনি ৬নং সেক্টরে উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশারের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময় তিনি পাক হানাদার বাহিনীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইদ্দিছ উল্লাহকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিশেষ অবদানের জন্য তৎকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গনী ওসমানী’র স্বাক্ষরকৃত সনদপত্র প্রদান করা হয়।
কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় ঠাঁই পায়নি ইদ্দিছ উল্লাহর নাম। এমনকি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত রয়েছেন যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য ১৯৯৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখা থেকে সুপারিশও করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাননি তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা ইদ্দিছ উল্লাহ বলেন, 'আতাউল গনি ওসমানী স্যারের সাথে আমার দুইবার দেখা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র ওনার হাত থেকে আমি গ্রহণ করি।'
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আমি অবহেলিত। কষ্টে জীবনযাপন করছেন। অথচ বর্তমানে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে আছেন। সরকারি সুযোগ সুবিধাও নিচ্ছেন তারা।'
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার কমান্ডার নূর উদ্দীন বলন, 'অনলাইনে যারা আবেদন করেছিল তাদের যাচাই বাচাই প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো হয়ে গেছে। এখন আর কোন সুযোগ নেই। যদি পরবর্তীতে আবার আবেদন করার জন্য সরকার সুযোগ দেয় আর উনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন তাহলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।'