স্বাধীনতা দিবসে নিরানন্দ মুক্তিযোদ্ধা মজুন মিয়া
আজ মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিনে স্বাধীন হয়েছিল দেশ। এ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী পালিত হয়েছে নানা কর্মসূচি। কিন্তু এই দিনে হাসি নেই মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়ার মুখে। বরং জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর গ্রামের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে মজনু মিয়া। ১৯৭১ সালে ছিলেন টগবগে যুবক। সেসময় দেশ উত্তাল ছিল। পাকিস্তানিদের শোষণ আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এ দেশের আপামর জনগণ। ঠিক তখনই জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে।
মজনু মিয়ার বয়স এখন প্রায় ৬৪ বছর। বসতভিটা হারিয়ে বর্তমানে তিনি জয়েনপুরস্থ একটি গুচ্ছগ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
যুদ্ধকালীন ১১নং সেক্টরে মজনু মিয়ার সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন- আবেদ আলী, সুলতান গিয়াস ও আলতাফ হোসেন। তৎকালীন সময়ের অধিনায়ক মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদপত্রও (নম্বর ১৬৫৮৮৫) পান তিনি। কিন্তু তিনি আজও পাননি মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে মজনু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ভারতের কাকড়ীপাড়া প্রশিক্ষণ শিবিরের আজিম মাহবুরের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এরপর নিজ জেলা গাইবান্ধার কামারজানি, কঞ্চিবাড়ী ও দক্ষিণ দূর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্যাপ্টেন হামিদ উল্লার নেতৃত্বে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমার অধিনায়ক ছিলেন আব্দুল হামিদ পালোয়ান।’
এদিকে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মজনু মিয়া সকল প্রমাণাদি দিয়ে গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে গত বছর অনলাইন আবেদন করেন। কিন্তু উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক মজনু মিয়ার নাম বাতিল করে তাকে ‘গ’ তালিকাভুক্ত করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মজনু মিয়ার সনদপত্র থাকলেও ক্রমিক নম্বর নেই। এ কারণে তাকে বাতিল করা হয়েছে। অথচ ওই সনদপত্রের অপর পৃষ্ঠায় ক্রমিক নম্বর ছিল। যার নম্বর-১৬৫৮৮৫। বাধ্য হয়ে মজনু মিয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আপিল করেন। যার আবেদন নম্বর ২২০০৮। তবে আজও আপিলের নিষ্পত্তি হয়নি।
তবে সম্প্রতি গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকার সাদুল্লাপুর ইউএনও’র কাছে ডিও লেটার দেন। ইউএনও রহিমা খাতুন ওই ক্রমিক নম্বর যাচাইয়ের জন্য সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দেন। এ সময় মজনু মিয়ার যুদ্ধকালীন যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাইকালে ক্রমিক নং খুঁজে পায়। যার ফলে উল্লেখিতে ক্রমিক নম্বরটি অর্ন্তভুক্তকরণে ইউএনও রহিমা খাতুনকে একটি প্রতিবেদন দেন সমাজসেবা অফিসার মানিক চন্দ্র রায়।