‘আমরা পাবলিক ঠকানির ব্যবসা করি না’

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আমির হামযা ফকির । ছবি: বার্তা২৪.কম

আমির হামযা ফকির । ছবি: বার্তা২৪.কম

ছোট একটা ভ্যান গাড়ি। তার উপরে বসানো হয়েছে কাচের জার। পাশেই ছড়ানো-ছিটানো বাহারি ফলের সমাহার। এক ব্যক্তি ফল কেটে টুকরো করে জারের ভেতর ফেলছে। তারপর পরিমাণ মতো পানি, চিনি ও অন্যান্য উপাদান মিশ্রণ করে শরবত তৈরি করছেন। ভ্যান গাড়ির পাশ দিয়ে পথচারীরা হেঁটে গেলেই শরবত কিনে খাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় গৌরীপুর পৌর শহরের হারুনপার্ক মোড় এলাকায় বার্তা২৪.কমের ক্যামেরায় এই দৃশ্য ধরা পড়ে। কাছে গিয়ে কথা বলে জানা যায় ওই ব্যক্তির নাম আমির হামযা ফকির (২৮)। তিনি গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টগড় গ্রামের ইদ্রিস আলী ফকিরের ছেলে। অভাবের সংসারে জীবিকার তাগিদেই পাঁচ বছর ধরে এই কাজ করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শরবতের উপকরণ তৈরি করতে করতেই এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছিলেন আমির হামযা। ছোট একটা চাকু নিয়ে খুব দ্রুততার সঙ্গেই ফলগুলো টুকরো টুকরো করছিলেন তিনি। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘অভাবের কারণে ইশকুলে পড়তে পারি নাই। পেটের দায়ে ছোট থাকতেই মাইনষ্যের কাজ-কাম কইর‌্যা দিন চালাইতে অইছে। তয় অহন আর মাইনষ্যের কাম করি না। পাঁচ বৎস্যর ধইর‌্যা শরবত বেইচ্যা সংসার চালাইতাছি।’

এরই মধ্যে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় চারদিক। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করে হারুনপার্ক এলাকায়। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পলিথিন দিয়ে ভ্যানগাড়িতে রাখা মালামাল ঢেকে দেন আমির হামযা। আর বৃষ্টি থেকে নিজে বাঁচতে আশ্রয় নেন পাশের একটি চায়ের দোকানে। সেখানে দাঁড়িয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প হয় তার। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যবসার হিসাব অন্য রকম। দিনের বেলা শরবত বেচি না। শরবত বেচা শুরু হয় সইন্ধ্যার পর থেইক্যা। দূর-দূরান্তের লোক আমার এই হানে শরবত খাইতে আহে। কারণ আমার শরবতের ব্যবসার একটা সুনাম আছে।’

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/27/1553663062460.jpg

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হারুনপার্ক এলাকায় ভ্যানগাড়ি নিয়ে শরবত বিক্রি করেন আমির হামযা। কলা, আপেল, মাল্টা, তরমুজ, পেঁপে, বেল, শ্রীফল, অ্যালোভেরার সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি, তোকমা, পানি ও চিনির মিশ্রণ ঘটিয়ে শরবত তৈরি করেন তিনি। প্রতি গ্লাস শরবতের মূল্য ১০ টাকা। তবে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লেবু থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলের মজাদার শরবত তৈরি করেন তিনি। এর জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।

প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ টাকার শরবত বিক্রি করে অর্ধেক লাভ হয় তার। লাভের এই টাকা দিয়েই চলে তার সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ।

দাম্পত্য জীবনে আমির হামযার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও দুই ছেলেকে হাফেজ বানাতে চান তিনি।

আমির হামযার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই বৃষ্টি থেমে যায়। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে ১১টার ঘরে। এমন সময় কয়েকজন ব্যক্তি ভ্যানগাড়ির সামনে এসে শরবত চাইলেন। তাদের মধ্য থেকে মহসীন মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি আমির হামযাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কী শরবতে স্যাকারিন নাইতো? বুইজ্জা খাওয়াইয়ো। শরবতে স্যাকারিন থাকলে তোমার কিন্তু বিপদ আছে।’

কথার রেশ টেনে আমির হামযা বলেন, ‘শরবতে স্যাকারিন দিয়া আমরা পাবলিক ঠকানির ব্যবসা করি না। হামযা ফকিরের শরবতের গুণই অন্যরকম, এর মইধ্যে কোনো ভেজাল নাই। খাইলে তৃপ্তি পাইবেন, আর না খাইলে পস্তাইবেন।’