বগুড়ায় 'ছেলে ধরা' আতঙ্কে স্কুলে যাচ্ছে না শিশুরা

  • গনেশে দাস,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বগুড়া,বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিখোঁজ হওয়া দুই শিশু, ছবি: বার্তা২৪

নিখোঁজ হওয়া দুই শিশু, ছবি: বার্তা২৪

'ছেলে ধরা' আতঙ্ক বিরাজ করছে বগুড়ার একটি গ্রামে। দেড় বছরের ব্যবধানে দুইটি শিশু নিখোঁজ এবং আরও তিনটি শিশুকে চুরির চেষ্টার ঘটনায় এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিশু হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।

এ কারণে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে গেছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ শিশু চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। বরং 'ছেলে ধরা' সন্দেহে গ্রামবাসী এক যুবককে আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করে এবং থানায় খবর দেয়। কিন্তু থানা থেকে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দিতে বলা হয়। পরে ওই যুবক স্বপরিবারে আত্মগোপন করে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৭ এপ্রিল)  সরেজমিনে বগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়নের রজাকপুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা এই অভিযোগ করেন।  রজাকপুর পুর্বপাড়া গ্রামের খায়রুল ইসলাম বার্তা ২৪.কমকে জানান, তার একমাত্র পুত্র মাহফুজ (৮) স্থানীয় রজাকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। ২৯ মার্চ দুপুরে মাহফুজ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে। এরপর বিস্কুট কেনার জন্য মা’র কাছ থেকে ৫ টাকা নিয়ে গ্রামের দোকানে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরদিন ৩০ মার্চ বগুড়া সদর থানায় একটি জিডি করেন। (জিডি নং-২০২৫)। থানায় জিডি করার পর রোববার পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি।

খায়রুল ইসলাম বলেন, থানায় খোঁজ নিতে গেলে পুলিশ বলেন আশপাশে খোঁজ খবর করে সন্ধান পেলে থানায় জানাতে বলে।  একমাত্র ছেলে হারিয়ে পাগল প্রায় খায়রুল ইসলাম বলেন ধনী মানুষের সন্তান হারালে পুলিশ- র‌্যাব উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমরা গরীব মানুষ এ কারনে থানায় গেলে পুলিশ আমাদেরকেই খোঁজ করতে বলে।

বিজ্ঞাপন

গ্রামবাসীরা জানান, ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর একই গ্রামের আসাদ আলীর ৫ বছরের শিশু কন্যা ইশামনি একই ভাবে নিঁখোজ হয়। ওই ঘটনায় থানায় জিডি করা হলেও (জিডি নং-২০১৭ তাং-২৭-১১-১৭) পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ।

তবে গত ২৯ মার্চ ২য় শ্রেনীর স্কুল ছাত্র মাহফুজ নিখোঁজ হওয়ার পর গ্রাম জুরে 'ছেলে ধরা' আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকদের অনেকেই তাদের শিশু সন্তানদেরকে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। যাদের সন্তান স্কুলে যাচ্ছে তারাও রয়েছেন আতঙ্কে।

রজাকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, তার স্কুলের ছাত্র মাহফুজ নিখোঁজ হওয়ার পর দিন থেকে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। আতঙ্কে শিশুরা স্কুলে আসছে না।

একই গ্রামের দুই শিশু নিখোঁজের পর গ্রামবাসীর সন্দেহ একই গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে তারেকুল ইসলাম তারুর (২২) দিকে।

গ্রামবাসী বলেন, দুই শিশু নিখোঁজ হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী গ্রামের আরও তিন শিশুকে ফুসলিয়ে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারু। ওই সব শিশুদের বাবা গরীব মানুষ হওয়ায় তারা কোন আইনগত ব্যবস্থা নেননি। তারুর এ ধরণের আচরনে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাকে সন্দেহ করছে। এ কারণে গত ৩১ মার্চ রোববার গ্রামের লোকজন তারুকে আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের কাছে সোপর্দ করে। পরে থানা পুলিশ তাকে গ্রহন না করায় পরিষদ থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তারু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছাড়া পেয়ে অসুস্থতা জনিত কারনে পরদিন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে পরদিন পালিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

এদিকে গত সোমবার থেকে তারুর বাবা-মাসহ পরিবারের অপর সদস্যরাও বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

নুনগোলা ইউপি চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিন বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘তারুকে ইউনিয়ন পরিষদে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়েছে। এ কারণে তারুকে থানায় নিয়ে গিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বগুড়া সদর থানায় ফোন করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অনুরোধ করি। কিন্তু ওসি সাহেব কোন অভিযোগ ছাড়া তারুকে থানায় নিয়ে যেতে আপত্তি জানালে তারুকে ছেড়ে দেয়া হয়। আর এই সুযোগে তারু স্বপরিবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।’

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘মাহফুজ নামের একটি শিশু হারানোর বিষয়ে থানায় জিডি হয়েছে। নুনগোলা ইউপি চেয়ারম্যান তারু নামের একজনকে আটক করে থানায় ফোন করেছিল। কিন্তু চেয়ারম্যানের অভিযোগে পুলিশ কাউকে থানায় আনতে পারে না। এ কারণে পুলিশ তারুকে আটক করেনি। শিশু নিখোঁজের জিডি অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে ওসি জানান।