সাজার মেয়াদ শেষেও কারাগারে ৩ ভারতীয় নাগরিক
অবৈধভাবে সীমান্ত পারি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন ভারতীয় তিন নাগরিক। অনুপ্রবেশের দায়ে তাদেরকে আটক করে আদালতে পাঠায় বিজিবি। অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। আদালতের এই রায়ের পর ঐ তিন ভারতীয় নাগরিককে চুয়াডাঙ্গা কারাগারে পাঠানো হয়।
ভারতীয় এই তিন নাগরিক পৃথক সময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও এখনো তারা সাজা ভোগ করছেন কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর। দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকার ফলে তারা মানসিকভাবে অনেকটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বলেও কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
আটককৃত ভারতীয় নাগরিকরা হলেন ভারতের নদীয়া জেলার তেহট্রর কিশোরী বিশ্বাসের ছেলে ক্লিনটন বিশ্বাস (২০), ভারতের হয়ালঘাট জয়জালের রাম বিকাশের ছেলে জ্যোতিষ চৌধুরী (৩৬) ও ভারতের নদীয়া জেলার ভীমপুর রাঙ্গেরপোতার মান্দার মণ্ডলের ছেলে আব্বাস মণ্ডল (৩০)।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের সুপার নজরুল ইসলাম জানান, কারাগারে আটককৃত তিন ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে সীমান্ত পারি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার অপরাধে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।
আটককৃত ভারতীয় নাগরিক ক্লিনটন ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বন্দি রয়েছেন। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ক্লিনটনের সাজার মেয়াদ শেষ হলেও তিন মাস যাবৎ তিনি কারাগারেই বন্দি রয়েছেন।
আরেক ভারতীয় নাগরিক আব্বাস মণ্ডল ২০১৮ সালের ৫ জুন কারাগারে পাঠানো হয়। তারও সাজার মেয়াদ তিন মাস পার হয়ে গেছে। আব্বাস মণ্ডলও এখন কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে সব থেকে দীর্ঘ সময় ধরে বন্দি রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক জ্যোতিষ চৌধুরী। ২০১৭ সালের ৯ জুন থেকে হাজতি আসামি হিসেবে কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। আদালত জ্যোতিষকে এক মাস সাজা দেওয়ার পর মুক্তির আদেশ দেন একই বছরের ৪ জুলাই। কিন্তু সাজার মেয়াদ এক বছরের বেশি সময় পার হলেও জ্যোতিষ এখনো কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
ভারতীয় তিন নাগরিকের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবির পরিচালক ইমাম হাসান জানান, তিন ভারতীয় নাগরিকের মধ্যে ক্লিনটনকে ভারতে ফেরত নেওয়ার জন্য বিএসএফ-কে চিঠি দেওয়া হয় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি। চিঠিতে ক্লিনটনকে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে ফেরত পাঠানোর কথা বিজিবি পক্ষ থেকে লেখা হলেও সেইদিন ক্লিনটনকে ফেরত নেয়নি বিএসএফ।
পরবর্তীতে ২৭ মার্চ দ্বিতীয় দফায় বিজিবির পক্ষ থেকে ক্লিনটনকে ফেরত নেওয়ার জন্য বিএসএফকে চিঠি দেওয়া হয়। আগামী ১৫ এপ্রিল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ক্লিনটনকে ভারতে ফেরত নেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠির উত্তর দেয় বিএসএফ। তবে ভারতীয় বাকি দুই নাগরিককে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য বিজিবির কাছে নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমর্চার সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সাজা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আসামিকে কারাগারে রাখা মানবতা লঙ্ঘনের সমান। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, অতি দ্রুত ভারতীয় এই তিন নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে তাদের পরিবারের কাছে যেন হস্তান্তর করা হয়।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সাজার মেয়াদ শেষ হবার পর কারাগারে সাজা ভোগ করা সুশাসনের মধ্যে পড়ে না। অবিলম্বে ভারতীয় তিন নাগরিককে তাদের দেশে ফেরৎ পাঠিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’