ইলিশের দাম-চাহিদা দুটোই বেড়েছে
বৈশাখ মানে এক ধরণের মুগ্ধতার নাম। বৈশাখ মানে বাঁধ ভাঙা আনন্দের উচ্ছ্বসিত জোয়ার-সকল প্রাণের মিলন মেলা। পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারা, প্রেরণা জোগায় সুস্থ সংস্কৃতি অনুশীলনের। তাই বৈশাখ এলেই লালিত সংস্কৃতির ঐতিহ্য পান্তা ইলিশের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর সেই ইলিশ যদি হয় পদ্মা নদীর, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। বৈশাখ উদযাপনে ছাড়িয়ে যায় ভিন্ন মাত্রা।
এবারের বৈশাখেও পদ্মা নদীর ইলিশের প্রতি ভোজন পিপাসু বাঙালিদের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। বৈশাখে পদ্মার ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এখন রাজবাড়ীর সদর, পাংশা ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার জেলেরা ইলিশ মাছ ধরার কাজে ভীষণ ব্যস্ত সময় পাড় করছে। এখানকার জেলেরা রাতভর মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
এদিকে, পদ্মার ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকের থেকে কয়েকগুণ দাম হাঁকাচ্ছেন এমন অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। আবার বরিশালের ইলিশকে পদ্মার বলেও চালিয়ে দিচ্ছে তারা।
তবে রাজবাড়ীর কয়েকটি বাজারের মাছের আড়তদাররা বার্তা ২৪.কমকে জানিয়েছেন- সব সময়ই পদ্মার ইলিশের চাহিদা থাকলেও এবারের বৈশাখকে ঘিরে ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি বছর পদ্মার ইলিশের সংগ্রহ কম থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছেনা।
গোয়ালন্দের মাছ ব্যবসায়ী বাদল বিশ্বাস বার্তা ২৪.কমকে জানান, বৈশাখের কারণে পদ্মার ইলিশের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ কারণেই কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ছিল ৬শ থেকে ৭ টাকা কেজি। আর ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ছিল ৮শ টাকা প্রতি কেজি। কিন্তু বৈশাখের কারণে পদ্মার ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা এখন ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৯শ টাকা। আর ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকা কেজি দরে।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পদ্মার ইলিশের চাহিদা থাকায় স্থানীয় জেলেরা গোয়ালন্দ আড়ত থেকে বরিশালের ইলিশ কম মূল্যে কিনে এনে তা ফেরি ও লঞ্চে যাত্রীদের কাছে পদ্মার ইলিশ বলে চড়া মূল্যে বিক্রি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা বিক্রেতা জানান, ফেরি ও লঞ্চ যাত্রীদের কাছে পদ্মার ইলিশের চাহিদা ব্যাপক। এমনও যাত্রী রয়েছেন যারা পদ্মার ইলিশের কথা শুনলেই দ্বিগুণ দামে মাছ কিনে নিয়ে যান। তাই আমরা আড়ত থেকে বরিশালের মাছ এনে ফেরিতে পদ্মা বলে চালিয়ে দেই।
বালিয়াকান্দির আনন্দ বাজারের মৎস্য আড়তদার মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, পহেলা বৈশাখে পদ্মার ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় আমরা ইলিশ মাছ বেশি আমদানি করার চেষ্টা করছি। কারণ স্বাভাবিক সময়ে যে মাছগুলো ৮-৯শ টাকা কেজি বিক্রি হয় সেই মাছগুলোই বৈশাখে বিশেষ করে পদ্মার ইলিশগুলো বিক্রি হয় ১২০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত। তবে পদ্মার ইলিশগুলো বেশি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা রাজধানীতে পাঠাচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মজিনুর রহমান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘পদ্মার ইলিশের স্বাদ সুস্বাদু হওয়ায় এ মাছের খ্যাতি রয়েছে সারা বিশ্বে। কয়েক বছর আগে পদ্মায় ইলিশের উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পায়। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিশেষ নজরদারি ও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় গবেষণার উন্নয়নে এখন থেকে মৎস্যখাতে ইলিশের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করছি দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা পদ্মার ইলিশ রফতানিও করতে পারব। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপকহারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।’