হাঁস পালনে অভাব জয়
বগুড়া: হাঁস পালন করে অভাব জয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বগুড়ার আবু সাঈদ ও জাহানারা বেগম। শুধু হাঁস পালন করেই তারা নিজেদের বাড়ি করেছন, দুই সন্তানকে লেখাপড়াও করাচ্ছেন। হাঁস পালনের ব্যবসা করে মাত্র তিন বছরেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে এই দম্পতি।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালুন্দা গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ ও জাহানারা। তারা নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন ক্যাম্বেল প্রজাতির হাঁসের খামার। তাদের খামারে এখন রয়েছে পাঁচ শতাধিক হাঁস।
বার্তা ২৪.কমকে জাহানারা বলেন, তিন বছর আগেও তাদের সংসারে ছিল অভাব। সংসারে ছেলে মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো। এমন অবস্থায় সরকারি কোনো (ভিজিড, ভিভিএফ কার্ড) সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, কোনো এনজিও তাদের ঋণ দিত না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতিবেশী হাতেম আলী হাঁস পালনের পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক দুই হাজার টাকায় ১০০ পিস ক্যাম্বেল জাতের একদিন বয়সী হাঁসের বাচ্চা কেনেন তারা।
হাঁস পালনের অভিজ্ঞতা না থাকায় রোগ-ব্যধিতে জাহানারাদের বেশ কিছু হাঁস মারা যায়। তবুও যেগুলো টিকে ছিল সেই হাঁসগুলোর পাড়া ডিম বিক্রি করেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেন তারা। পরে আরও ১০০ হাসের বাচ্চা কেনেন। এতে ডিমের পরিমাণ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি পুরুষ হাঁস বিক্রি করে আয়ও বাড়তে থাকে।
আবু সাঈদ জানান, এবার ডিম পাড়া শেষে হাঁস বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকার। তারপরও পুরনো হাঁস রয়েছে ৭০টি। এসব হাঁস থেকে প্রতিদিন গড়ে ডিম আসে ৩০-৩৫টি। সপ্তাহে তিনদিন ১২ টাকা পিস দামে ডিম বিক্রি করেন বাড়িতে বসেই।
এ বছর জাহানারা ২৬ টাকা দরে একদিন বয়সী ৫০০ হাঁসের বাচ্চা কিনেছেন। এসব বাচ্চার বয়স এখন এক মাস। এর মধ্যে শিয়াল খেয়ে ফেলেছে ২০টি বাচ্চা। ৪৮০টি হাঁসের বাচ্চার মধ্যে কোনো রোগ-ব্যাধি না হলে সাড়ে চার মাস পর থেকে ডিম দেওয়া শুরু হবে। তবে এর মধ্যে কমপক্ষে ২০০ হাঁস পুরুষ হিসেবে চিহ্নত করা হবে। এসবের মধ্যে শতকরা ১০টি পুরুষ হাঁস খামারে রেখে বাকিগুলো বিক্রি করবেন ২০০-২৫০ টাকা পিস হিসেবে।
জাহানারা বলেন, ক্যাম্বেল জাতের একটি হাঁস ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৬০টি ডিম পাড়ে। হাঁসের ডিমের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। ডিম বিক্রি করতে হাটে যেতে হয় না। হ্যাচারি মালিকদের পক্ষে সপ্তাহে তিনদিন বাড়ি থেকে ডিম কিনে নিয়ে যাওয়া হয়। হাঁসের ডিম বিক্রি করেই হাঁসের খাবার কেনা ও সংসার খরচ চালানোর খরচ উঠে যায়। এমনকি দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচও চলে হাঁস ও ডিম বিক্রি করেই।
আবু সাঈদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, তিন বছর আগে অন্যের জমিতে কাজ করলেও এখন আর তা করতে হয় না। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে হাঁসের ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে ইতোমধ্যই দুই শতাংশ জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন। বাচ্চা হাঁসগুলো বড় হয়ে ডিম দেওয়া শুরু করলে প্রতি মাসে ডিম বিক্রি করে আয় করবেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও পুরুষ হাঁস বিক্রি করে হাঁস পালনের জন্য পুকুর লিজ নেবেন।
জাহানারা আর আবু সাঈদকে দেখে হাঁস পালনে উৎসাহিত হয়েছে গ্রামটির অনেকেই। তাদের থেকে শিখে হাঁস পালন করে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় বহু মানুষ। দূর করেছেন সংসারের অভাব, দাঁড়িয়েছেন নিজের পায়ে।