বগুড়ায় শত বছরের ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বগুড়ায় শত বছরের ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা। ছবি: বার্তা২৪.কম

বগুড়ায় শত বছরের ঐতিহ্য বৈশাখী মেলা। ছবি: বার্তা২৪.কম

বগুড়া শহরে বর্ষবরণ উপলক্ষে নানা ধরনের বর্ণিল উৎসবের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পিছিয়ে নেই এ জেলার গ্রামের মানুষ। গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ।

এমনি একটি গ্রাম নিমাইদীঘি। বগুড়া শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার শেষ সীমানায় এই গ্রামের অবস্থান। এই গ্রামে নিমাইদীঘি আদর্শ কলেজ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। শত বছরের পুরাতন এই মেলার পরিধি প্রতি বছরই বাড়ছে। এক সময় এই মেলার নাম ছিল জামাই ও বউ মেলা। সময়ের ব্যবধানে মেলার নাম হয়েছে বৈশাখী মেলা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বাড়িতে চলছে উৎসবের আমেজ। প্রত্যেক পরিবারের মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে নিয়ে আসা এই মেলার অন্যতম বৈশিষ্ট।

বিজ্ঞাপন

চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে তিনদিন চলে এই মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ হরেক রকমের মিষ্টি। এছাড়াও রয়েছে মোটরসাইকেল খেলা, নাগরদোলা, বিভিন্ন আইটেমের খেলনা, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, মেয়েদের প্রসাধনীর দোকান।

নিমাইদীঘি কলেজ মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং গ্রাম্য মাতব্বরদের মধ্যে বিরোধের কারণে পার্শ্ববর্তী বাগিচা পাড়া এবং পাঠানপাড়া গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে বসছে আরও দুইটি বৈশাখী মেলা।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ এপ্রিল) সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে মেলায় ঘুরছে। মেলায় ঘুরতে আসা জাহাঙ্গীর হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তিনি দোকান বন্ধ রেখে সন্তানদের নিয়ে মেলায় বেড়াতে এসেছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/14/1555245901302.gif

আব্বাস আলী নামের একজন জানান, তার তিন মেয়ে জামাই মেলা উপলক্ষে বেড়াতে এসেছে। মেয়েরা বাড়িতে রান্নার কাজ করছে। আর তিনি পাঁচ নাতি-নাতনিকে মেলায় নিয়ে এসেছেন।

মেলায় আগত দোকানিরা জানান, মেলায় বিকেল থেকে উপচে পড়া ভিড় হবে। তবে পহেলা বৈশাখের এই মেলায় কোনো গৃহবধূ আসবেন না। এটাই এলাকার রীতি। পহেলা বৈশাখ মেলা জামাইদের জন্য। শ্বশুরবাড়িতে আসা জামাইদের পছন্দ মতো কেনাকাটা করতে প্রত্যেক বাড়ি থেকে সাধ্যমতো নগদ টাকা দিতে হয়। সেই টাকায় জামাইরা মেলা থেকে কেনা কাটা করবেন। তবে এর পরদিন ওই স্থানের মেলার নাম হবে বউ মেলা। গ্রামের বউ-ঝি দল বেঁধে মেলায় আসবে। কেউ কিনবে সংসারের ব্যবহারী জিনিসপত্র। আবার কেউ কিনবে চুড়ি-ফিতা থেকে শুরু করে রকমারি প্রসাধনী।

মেলায় আগতদের কেউ বলতে পারে না এটি কত বছর আগে থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারা জানান, বছর যাচ্ছে মেলা জমজমাট হচ্ছে। মেলায় দোকান পাট ও লোকজন বাড়ছে।

তবে মেলা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বার্তা২৪.কমকে জানান, একশ বছরের বেশি সময় ধরে নিমাইদীঘি গ্রামের জামাই-বউ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে মেলার নাম করা হয়েছে বৈশাখী মেলা। প্রতি বছরই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তিনদিন ব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই মেলা পরিচালনার জন্য গ্রামের ১০১ জনকে নিয়ে কমিটি করা হয় প্রতি বছর। মেলার ব্যয় মিটানোর জন্য প্রত্যেক সদস্য ১০০ টাকা এবং সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অতিরিক্ত ১০০০ টাকা দিয়ে থাকেন।