নবীগঞ্জে শিশু ধর্ষণ: ২০ দিনেও আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের ২০ দিন পরও আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ। উল্টো আসামি পক্ষের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিশুটির পরিবার। তবে পুলিশের দাবি, অভিযুক্তকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এদিকে, ভয়ে ও আতঙ্কে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ধর্ষণের শিকার শিশুটি। বারবার পরিবারের লোকজন ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে স্কুলে নেওয়ার চেষ্টা করেও তার আতঙ্ক কাটাতে পারছেন না।
স্থানীয়রা জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামের এক কৃষকের আট বছর বয়সী শিশুকন্যা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কৃষিকাজ করতে তার বাবা প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকেন।
গত ২০ মার্চ বিকালে বাবা বাড়িতে না থাকায় স্থানীয় কান্দি হাওর থেকে ওই মেয়ে গরু আনতে যায়। সেখানে একা পেয়ে স্থানীয় আব্দুল ওয়াহিদের ছেলে জাকারিয়া তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ওই গ্রামের আব্দুল জলিল দূর থেকে ঘটনাটি দেখে ফেললে জাকারিয়া পালিয়ে যায়। পরে আব্দুল জলিল মেয়েটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ২৬ মার্চ ধর্ষিতা শিশুর মা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন; কিন্তু আজও পুলিশ অভিযুক্ত জাকারিয়াকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী, স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ধর্ষণের বিচারের দাবিতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
ভুক্তভোগী শিশুটির মা বলেন, ‘‘পৃথিবীকে চেনার আগেই আমার মেয়ের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, সে তাণ্ডব কাটিয়ে আমার মেয়ে কোনো দিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি-না, জানি না। তবে এখন আমার মেয়ে স্কুলে আসা তো দূরের কথা, ঘর থেকে বের হতেও চায় না। লোকজন দেখলেই সে ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকে!’’
তার অভিযোগ, ‘‘আসামি পক্ষ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমাকেসহ আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নেবে বলেও প্রচার করছে। আমার মেয়েকে যে লম্পট এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছে, আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’’
ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল দাশ মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের আশপাশে অনেক অপকর্মই ঘটে, কিন্তু এই ছাত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি শোনার সাথে সাথে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আমরা ঘৃণ্য এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোহর রায় বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণির মেধাবী এই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে আজ বিদ্যালয়ছাড়া। একাধিক বার তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার জন্য পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেও তাকে আনতে পারিনি। আমরা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীরা ধর্ষক জাকারিয়াকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর বলেন, ‘‘মামলাটি তদন্ত করছেন গোপলারবাজার তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর কাউসার আলম। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’’