বদলি হলেই তদবিরে চাঁদপুর ফিরে আসেন তিনি
বদলি হন, আবার ঘুরে ফিরে চলে আসেন চাঁদপুর হাজিগঞ্জ উপজেলায়। এবার বদলি হয়েছেন ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলায়। উপজেলা শিক্ষা অফিস সহকারীর মো. কাউসার হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই এমন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন।
চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ হলেও প্রমোশন নিয়ে এখন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। কচুয়া উপজেলায় তার জন্মস্থান। কর্মজীবনের শুরুতে সচিবালয় কর্মরত ছিলেন। তারপর ছুটে আসেন উপজেলা শিক্ষা অফিসে। ২০০৮ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলায় তার আগমন। তারপর থেকে যাওয়া-আসা। যতবারই বদলি হন ঘুরেফিরে সে হাজীগঞ্জে ফিরে আসেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, শিক্ষা অফিসের এ সহকারি হাজীগঞ্জ উপজেলায় ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাজীগঞ্জ যাওয়া-আসা করেছেন ৮ বার। লিখিত ও অলিখিত অনিয়মের অভিযোগে বদলি হয়েছেন।
বদলির খবর পাওয়া মাত্র শুরু হয় তার দৌড় ঝাঁপ। দশ বছরে তিনি চাঁদপুরের মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও চাঁদপুর পিটিআই অফিসে কর্মরত ছিলেন। প্রতিবারই ওইসব উপজেলা থেকে পুনরায় হাজিগঞ্জ উপজেলায় আসেন এই কর্মকর্তা।
কী মধু এই হাজিগঞ্জ উপজেলায়? রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে জানা গেল হাজীগঞ্জ পৌরএলাকার আলীগঞ্জে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা দিয়ে খরিদ করেছেন ৬ কাঠা সম্পত্তি। শ্বশুরালয় মতলব দক্ষিণ উপজেলায় কথিত আছে ৪৫ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। নিজের ও স্ত্রীর নামে রয়েছে ব্যাংক একাউন্ট। গত ১০ বছরে হাজিগঞ্জ উপজেলায় তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের শুনানি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ না দেয়ায় নাজমুন নাহার নামের এক সহকারী শিক্ষিকার ইনক্রিমেন্ট কর্তন করেছেন। শিক্ষকদের সাথে অশোভনীয় আচরণ, শিক্ষা অফিসে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান, নানান অজুহাত দিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেছেন, কাউসার হোসেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও সচিবালয় থেকে শিক্ষা অফিসের ফাঁকফোকর জেনেশুনে তৃতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমান সরকার বেতন স্কেল বৃদ্ধি করলেও এই কাওসার হোসেন প্রায় ৫/৬ বছর আগে সম্পত্তি ক্রয় করেন।
সম্প্রতি কাউসার হোসেন আবারও বদলির আদেশ পেয়েছেন। আদেশের পর থেকে আবারও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বদলির আদেশ স্থগিত রাখার। এই কর্মকর্তা চাঁদপুর জেলার যে কোনো উপজেলায় থাকতে চেষ্টা করছেন।
তার স্ত্রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। আমার স্বামী কয়েক বছর আগে ৬ শতাংশ সম্পত্তি কিনেছে। মতলবে কোন সম্পত্তি ক্রয় করা হয়নি।’
বদলির বিষয়টি স্বীকার করে কাউসার হোসেন বলেন, ‘চাকরির বয়স ৩১ বছর। আমি কোনো অনিয়ম করেনি। শিক্ষিকার ইনক্রিমেন্টে আমার কোন ভুল ছিল না।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বুলবুল সরকার বলেন, ‘কাউসারের বিষয়ে গত সপ্তাহে বদলির আদেশ এসেছে। এবার তাকে বদলি করা হয়েছে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলায়।’
জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘বদলি হয়েছে শুনেছি। কিন্তু তিনি যেতে চান না। এবারও তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলায় সম্পত্তি কিনেছেন। শিক্ষকরা ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন না।