জোড়া সেতুর সংযোগস্থল
পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা মনে করেন, ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও পরবর্তীতে নির্মিত লালন শাহ সেতুর সংযোগস্থলে হতে পারে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। ভ্রমণপিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় বাড়ছে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। বিশেষ দিন বা ছুটির দিনগুলোতে বিনোদনের আশায় পদ্মার পাড়ে আসেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
ইতিহাস আর কিংবদন্তি নিয়ে পাবনার মানচিত্রে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে পাকশীর নৈসর্গিক দৃশ্য। ছুটির দিনে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে পাকশীর জোড়া সেতুর মিলনস্থল। ফলে পাকশীকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হলে সরকার রাজস্ব আয় করতে পারবে। এছাড়া ভ্রমণ পিপাসু মানুষও গভীর মুগ্ধতায় পাকশীর রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন।
আরও জানা গেছে, বিভাগীয় রেল শহর, জোড়া সেতু এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে পাকশীতে ইতোমধ্যে বহু অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। তাছাড়া রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগীয় অফিস পাকশীতে অবস্থিত হওয়ায় এখানে দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। পাশাপাশি লালন শাহ সেতু নির্মাণের পর ভিড় বহুগুণে বেড়ে গেছে। লালন শাহ্ সেতু নির্মাণের সময় ওই এলাকায় প্রকল্প অফিস, ফরেন কনসালটেন্স অফিস, অফির্সাস রেসিডেনসিয়াল এরিয়া, রেস্ট হাউস গড়ে ওঠে। এছাড়া পাকশী রিসোর্ট নামে ব্যক্তি মালিকানায় একটি বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চার হাজার ৫৪৭ একর আয়তনের পাকশী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২ ফুট উঁচু। ১৮৮০ সালে পদ্মা অববাহিকার ঘাঁটি গাড়ে বৃটিশরা। ফলে সেখানের বৃটিশ বাংলোগুলোর বাঁকে বাঁকে ইতিহাস উঁকি দেয়। বিকালের সূর্য যখন পদ্মা পাড়ে ডুব দেয় তখন যেকেউ হারিয়ে যায় ভালোলাগার সমুদ্রে। এখানে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে পূর্ণিমা উপভোগ করা যায়।
এলাকাবাসী জানান, পদ্মায় নৌ-বিহারের সুযোগ নেই, জোয়ার ভাটা নেই, তবে চোরাবালি আছে। আরও আছে নৈসর্গিক নির্জনতা। মনোরম ভ্রমণবিলাস কেন্দ্র হিসেবে পাকশীর যে সম্ভাবনা রয়েছে সেটা থাকা ও খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধার কারণে সফল হয়নি। সঙ্গে যোগ হয়েছে টয়লেট সংকট। তবে পদ্মায় গোসলের ব্যবস্থা থাকলে পর্যটকদের মন আরও টানতো। তারপরও আশ-পাশের জেলা-উপজেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসু ও উদ্ভিদপ্রেমীরা প্রকৃতির টানে সেখানে ছুটে যান।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে জোড়া সেতু এলাকায় ভ্রমণে আসা রাহেনুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বগুড়া থেকে পাকশীতে বেড়াতে এসেছি। লালন শাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, পদ্মার পাড় সবকিছু আমাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে।’
সাবরিনা পারভীন নামে আরেক দর্শনার্থী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দর্শনীয় স্থান হলেও এখানে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক।’
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছে।’
ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাচ্চু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পাকশীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে এখান থেকে সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করতে পারবে। তাই অবিলম্বে পাকশীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পাকশীকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে বলে শুনেছি।’