জগদীশ গুপ্তের বাস্তুভিটা এখন খান সাহেবের বাগান বাড়ী

  • সোহেল মিয়া, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, রাজবাড়ী, বার্তা ২৪ কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কথাসাহিত্যিক জগদীশ গুপ্তের বাস্তুভিটা, ছবি: বার্তা২৪.কম

কথাসাহিত্যিক জগদীশ গুপ্তের বাস্তুভিটা, ছবি: বার্তা২৪.কম

ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কথাসাহিত্যিক জগদীশ গুপ্তের বাস্তুভিটা। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত আনন্দ ভবনটি এখন পরিণত হয়েছে আব্দুল মতিন খানের বাগান বাড়ী। আর শত বছরের পুরনো খেলার মাঠটিও আজ সুকৌশলে দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দি হয়ে খোর্দ্দমেগচামী গ্রাম। পাশেই ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মেগচামী গ্রাম। দুই জেলার মোহনায় কথাসাহিত্যিক জগদীশ গুপ্তের জমিটুকু পড়েছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের মেগচামীতে। বাবা কৈলাস চন্দ্র গুপ্ত ও মা সৌদামিনী দেবীর ঘরে ১৮৮৬ সালে বাবার কর্মস্থল কুষ্টিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক গল্পকার জগদীশ গুপ্ত। বাবার কর্মস্থলে বেড়ে উঠলেও জীবনের বেশির ভাগ সময় স্ত্রী চারুবালা গুপ্তকে সঙ্গে নিয়ে জগদীশ গুপ্ত তার পূর্ব পুরুষের বাস্তুভিটা এই খোর্দ্দ মেগচামী গ্রামের আনন্দ ভবনে কাটিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এই গ্রামের ঐতিহ্য রাজা সীতারাম রায়ের বামা সুন্দরী স্টেট, চন্দনা নদীর তীর ঘেষাঁ পুড়াভিটা ও ছাইভাঙা গ্রামের মাটি আর মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে রচনা করেছেন তাঁর অসামান্য গল্প, নাটক, উপন্যাস, কবিতা আর প্রবন্ধ।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ বিনোদনী, রুপের বাহিরে, শ্রীমতী, রতি ও বিরতি, উদয় লেখা, উপায়ন, শশাঙ্ক কবিরাজের স্ত্রী, উপন্যাস লঘু-গুরু, দুলালের দোলা, রোমন্থ, কবিতা অক্ষরা, নাটক অসাধু সিদ্ধার্থ, নিষেধের পটভূমিকায়, প্রবন্ধ শরৎচন্দ্র, প্রভাত বাবুর গল্প আজো বাংলা সাহিত্য চির অম্লান।

বিজ্ঞাপন

খোর্দ্দমেগচামী গ্রামে ১৩ একর জমির ওপর শতাব্দীকাল আগে তাঁর বাবা কৈলাস চন্দ্র গুপ্ত পূর্ব পুরুষ আনন্দ গুপ্তের নামানুসারে গড়ে তোলেন এ আনন্দ ভবন। ফুল ও ফলের বাগান আর বিশাল পুকুর ও খেলার মাঠ এ অঞ্চলে আনন্দ ভবনকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। দখল হয়ে যাওয়া শতবর্ষী এ খেলার মাঠে ব্রিটিশ আমলে চালু করা হয় ভিএম শিল্ড টুর্নামেন্ট। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে বিখ্যাত ফুটবল টিমের নাম করা সব খেলোয়াড়দের পদভারে এই আনন্দ ভবনটি ছিল মুখরিত।

১৯৫৭ সালে ১৪ এপ্রিল জগদীশ গুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর বংশধররাই এটি দেখা শোনা করতেন।১৯৯৮ সালে গুপ্ত পরিবারের শেষ প্রতিনিধি বিদ্যুৎ কুমার গুপ্ত আনন্দ ভবনের ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ ও পুকুর সর্ব সাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখার শর্তে স্থানীয় আব্দুল মতিন খানের কাছে বিক্রি করে ভারতে চলে যান।

দীর্ঘ একযুগ আব্দুল মতিন খান সেই শর্ত মানলেও এখন তা ভঙ্গ করে নিজের দখলে নিয়েছেন। এলাকার যুবসমাজ ও প্রগতিশীল সুধীজনরা মাঠটি দখল করায় ফুঁসে ওঠে। মাঠটি দখলমুক্ত করে জগদীশ গুপ্তের এই শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষায় তারা এরই মধ্যে এলাকায় মানববন্ধনসহ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও পেশ করেছেন।

এ ব্যাপারে আব্দুল মতিন খান বার্তা ২৪.কমকে জানান, ‌জগদীশ গুপ্তের শেষ বংশধররা আমাদের কাছে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। দখল করার প্রশ্নই ওঠে না। একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

স্থানীয় ইতিহাস সংরক্ষক ও গবেষক কবি এম ইকরামুল হক বার্তা ২৪.কমকে জানান, আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যিক জগদীশ গুপ্ত তাঁর সাহিত্য চর্চার বেশীর ভাগ সময়ই কাঁটিয়েছেন এই আনন্দ ভবনে। তাঁর মৃত্যুর পর এই আনন্দ ভবনটি বেহাত হয়ে যায়। তরুণ প্রজন্মের মাঝে জগদীশ গুপ্তের সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই কথাসাহিত্যিকের বেহাত হয়ে যাওয়া শেষ স্মৃতিটুকু সংরক্ষণের উদ্যেগ নিতে হবে।