লন্ডন প্রবাসী মেয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে বৃদ্ধা গ্রামছাড়া
আঙ্গুরা বেগম, বয়স ৮০। স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। কানে কম শুনেন, চোখেও ঠিকমতো দেখতে পান না। এক মেয়ে ছাড়া তাকে দেখার আর কেউ নেই।
নিজের মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর স্বামীর ভিটেকে আঁকরে ধরে অনাহারে অর্ধাহারে পড়ে আছেন। কিন্তু স্বামীর প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ও জামাতার গভীর চক্রান্তে এখন ভিটে হারা হয়ে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন এই বৃদ্ধা। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আঙ্গুরা বেগমের ভিটে মাটি দখল করে নিয়েছেন সৎ মেয়ে ও জামাতা। অসহায় এই বৃদ্ধাকে শুধু নিজের ঘর থেকেই নয়, গ্রাম থেকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কামারগাওঁ পুড়াদিয়া গ্রামের মৃত আব্দাল মিয়া চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী আঙ্গুরা বেগম (৮০)। আব্দাল মিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আঙ্গুরা বেগমকে বিয়ে করেন।
জানা যায়, আঙ্গুরা বেগমের কোনো পুত্র সন্তান নেই। সাংসারিক জীবনে তার দুই মেয়ে। একটি তার নিজের গর্ভের, আরেকজন সৎ মেয়ে। দুই মেয়েকেই ভালো পরিবার দেখে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর নিজের গর্ভের মেয়ে উপজেলার কলিমপুর গ্রামে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। আর সৎ মেয়ে জহুরা খাতুন পরিবারসহ থাকেন লন্ডনে।
অন্যদিকে, আঙ্গুরা বেগম স্বামীর ভিটেতে ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া টিন-রেশন, প্রতিবেশী ও স্বজনদের দেয়া সাহায্য সহযোগিতার উপর ভর করে বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি তার এই ভিটেতে কু-নজর পড়ে প্রবাসী সৎ মেয়ে জহুরা ও তার জামাতা তুলা মিয়ার। তারা অসহায় এই বৃদ্ধার ভিটে দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর সহযোগিতায় তারা বৃদ্ধার মাথা গোজার এই আশ্রয়টি দখল করে নেন।
আঙ্গুরা বেগম বার্তা২৪.কম-কে জানান- অসহায় অবস্থায় থাকলেও সৎ মেয়ে কোনোদিন তাদের কোনো খোঁজখবর নেন না। সম্প্রতি সৎ মেয়ে তাকে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দেন। প্রথমে আঙ্গুরা বেগম রাজি না হলেও পরে স্থানীয় কয়েকজন লোকের কথায় তিনি রাজি হন। কিন্তু পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার পর আঙ্গুরা বেগমকে আর সেই ঘরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টাই তালা বন্ধ করে রাখা হচ্ছে ঘরটি।
বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। বর্তমানে তিনি একই উপজেলার চাঁনপুর গ্রামে ভাই শফিক মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন- ‘আমার একমাত্র চাওয়া স্বামীর ভিটেতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। এ ব্যাপারে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
অভিযুক্ত সৎ মেয়ে জহুরা ও তার জামাতা তুলা মিয়া দেশের বাহিরে থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় দীঘলবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন- ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। স্থানীয় মেম্বার বিষয়টি আমাকে জানায়নি।’
ইউপি সদস্য খালেদ হাসান দুলাল বার্তা২৪.কম-কে বলেন- ‘উনি কাগজপত্র নিয়ে আসলে আমরা বিষয়টি দেখে দেব।’ এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান বার্তা২৪.কমকে জানান- ‘এ ধরণের কোনো বিষয় আমাদের জানা নেই। যদি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অথবা তার আত্মীয়-স্বজন আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।’
তিনি বলেন- ‘জায়গা যদি কেউ দখল করে থাকে তাহলে সেটা আমাদের করার কিছু নেই। এটি আইনের মাধ্যমে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য আমরা সহযোগিতা করব।’