তীব্র গরমেও হবিগঞ্জের হাওরজুড়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা
বৈশাখ মাস, সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন ছাড়া শহরের মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আবার ঘরের ভেতরে থেকেও ভ্যাপসা গরমে হাসপাস করছেন। কিন্তু শহরের অবস্থা এমন হলেও গ্রামের দৃশ্য উল্টো।
এই গরমেও গ্রামের মানুষ ঘরে নেই। শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ নারী-পুরুষরা দাবদাহ উপেক্ষা করে বোরো ধান ঘরে তুলতে মাঠে কাজ করছেন। দিন কিংবা রাত তাদের কাছে যেন কোনো পার্থক্য নেই।
হবিগঞ্জের হাওরগুলোতে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরজুড়ে এখন শুধু পাকা ধানের রঙিন ঝিলিক আর মৌ মৌ ঘ্রাণ। সপ্তাহখানেক আগ থেকেই হবিগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। তবে শ্রমিক সংকট থাকায় ধান কাটায় অন্য বছরের তুলনায় অনেকটা ধিরগতি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তাই বোরো ধানের উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জেলায় এবার মোট পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধানের এমন ফলনে খুশি হবিগঞ্জের কৃষকরা। প্রচণ্ড তাপদাহেও কণ্ঠে ভাটিয়ালি গান ধরে ধান কাটছেন কৃষকরা। আর নারীরা খলায় (ধান তুলার মাঠ) কাজ করছেন বিশ্রামহীনভাবে।
সরজমিনে হবিগঞ্জের বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাওরেই ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। বৈশাখের প্রথম জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করবেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে ধান তোলার ব্যস্ততা।
কেউ ধান কাটছেন, কেউ শুকাচ্ছেন, কেউ মাড়াই করছেন আবার কেউ খড় শুকাতে ব্যস্ত। গ্রামের কৃষাণ বধু থেকে শুরু করে শিশু-বৃদ্ধরাও নিজেদের সাধ্যমতো ধান সহযোগিতা করছেন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালে কেউ ধান কাটতে যান। যারা ধান কাটতে মাঠে যান না, তারা খলায় কাজ করেন। সেখানে কাটা ধান মাড়াই করা হয়। তারপর শুকাতে দিতে হয়। অনেকে আবার শুকানোর আগে সেদ্ধও করে নিচ্ছেন। শুকনো ধান আবার মাঠ থেকে বাড়িতে নিতে হচ্ছে। সেই সাথে গো-খাদ্য হিসেবে খড় শুকাতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় সেগুলোকে আবার হাওরেই যত্ন স্তূপ করে রাখছেন।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলার কৃষক রাজেন্দ্র দাস বলেন, ‘বৈশাখে কাজের শেষ নেই। সারা বছর যে কাজ করি তাও বৈশাখের সমান হবে না। কারণ এ মাসটি আমাদের সারা বছরের হাসি-কান্নার মাস। সারা বছর ভালো থাকার জন্য এই মাসে রোগ-গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হয়।’
লাখাই উপজেলার কৃষক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘এ বছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তাই আমরা অনেক খুশি। তীব্র গরমে ধান কাটতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাও গায়ে (শরিরে) লাগছে না।’
একই উপজেলার কৃষাণী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘কাজের কোনো শেষ আছে? শুধু বৈশাখ মাস না, জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত চলবে আমাদের ব্যস্ততা। এখন খাওয়া-নাওয়ারও সময় নেই।’