ক্রিপ্টোকারেন্সি চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocarrency) বড় ধরনের একটি সাইবার অপরাধ। সাধারণ মানুষের অনেকেই জানেন না এর মাধ্যমে কত বড় ধরনের প্রতারণা করা যায়। দেশের বাইরে অনেক আগে থেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারক চক্র সক্রিয়। সম্প্রতি বাংলাদেশেও এই চক্র জাল বিস্তার করতে শুরু করেছে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান, গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এ ধরনের একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বগুড়ার সাইবার পুলিশ। দুই দিনের টানা অভিযান চালিয়ে লক্ষীপুর ও হবিগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আলী আশরাফ ভুঞা জানান, সাইবার পুলিশ বগুড়ার মনিটরিং সেল বেশ কয়েক মাস ধরে কিছু বিট কয়েন ব্যবসায়ীর চক্রের উপর নজরদারি রাখে। এক পর্যায়ে গত ২৩ এপ্রিল সাইবার পুলিশ বগুড়ার ইন্সপেক্টর এমরান মাহমুদ তুহিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল লক্ষীপুর এবং হবিগঞ্জ জেলায় তিন দিনব্যাপী অভিযান চালায়।
অভিযানে এই চক্রের মূলহোতা আহসান হাবিব ওরফে শাহ মো. তানিমকে (২৩) হবিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার আন্দিউড়া গ্রামের মৃত শাহ মোহাম্মদ হিরণের ছেলে। একই গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া ওরফে কাজী সোহেল (২৭) ও লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানার বামনী গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মারুফ হোসাইন ওরফে মারুফ বিল্লাহকে (২৫) গ্রেফতার করে।
তাদের কাছ থেকে দুইটি ল্যাপটপ, ১৬টি মোবাইল, ২০টি সিমকার্ড ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত দুইটি ওয়েবসাইট উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, অনলাইনে যেসব ডিজিটাল মুদ্রা পাওয়া যায় সেগুলোকে ক্রিপ্টোকারেন্সি বলে। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রানজেকশনের সময় আদান-প্রদানকারীদের তথ্য গোপন থাকে। বেশিরভাগ সময়ই থাকে অজ্ঞাত। এ ধরনের মুদ্রার বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রচলিত ভাষা বা সংকেতের লেখা তথ্য এমন একটি কোডে লেখা হয়, যা ভেঙে তথ্যের নাগাল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে বাংলাদেশে এ সব ক্রিপ্টোকারেন্সি জুয়া খেলা বা কালো টাকাকে সরকারের চোখ থেকে লুকানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই চক্রটি www.easypaid.com এবং www.bddollarcash.com নামের দু’টি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লেনদেন করে আসছিল। বাংলাদেশে Bitcoin, Bitcoin Cash, Litecoin, Etherium ক্রিপ্টোকারেন্সি অবৈধ। এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান Bitcoin বা বিটকয়েন। অনেকেই তাই বেশি লাভের আশায় বিটকয়েন কিনে রেখে দাম বাড়লে বিক্রির আশায় এই ব্যবসায় ঝুঁকছেন।
বিপিএল এবং আইপিএল -এর সময় Bet365 সহ আন্তর্জাতিক অনলাইনে জুয়ার আসরে অংশ নিতেও বাংলাদেশ থেকে এসব ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার হিড়িক পড়ে যায়। এছাড়া এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ডার্কওয়াভসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে মোটা অংকের অর্থ লেনদেন করা হয়। যেসব অর্থ দ্বারা অপরাধ সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
গ্রেফতারকৃতরা তাদের ওয়েবসাইট দু’টির মাধ্যমে অনলাইন ওয়ালেট হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তাদের গ্রাহক সংখ্যা গত ৫-৬ মাসে সাত হাজার ৩৬২ জন এবং এ পর্যন্ত তারা ২৭ হাজার আটশ’রও অধিক এক্সচেঞ্জ সম্পন্ন করেছে।
তাদের কাছ থেকে বিকাশ, রকেট এবং কিছু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের সাথে এসব মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতো। অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের টাকা তারা এসব অ্যাকাউন্টে জমা রাখতো। অনেক সময় গ্রাহকের টাকা নিয়ে কারেন্সি না দিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, এই চক্রের সাথে আরো বেশ কয়েকজন জড়িত। তাদের নামে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩০ এর ১ (খ) ধারায় মামলা হয়েছে।