৩৫ বছরে মে দিবসে ছুটি পাননি নৌবন্দরের শ্রমিকরা
মহান মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস আজ (১ মে)। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন আজ। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের নৌবন্দরের দুই সহস্রাধিক শ্রমিক জানেন না মে দিবস কিংবা শ্রম দিবস কী। ৩৫ বছরের মধ্যে কখনো এই দিবসে ছুটি পাননি এখানে কর্মরত শ্রমিকরা।
মে দিবসে শ্রমিকদের জন্য সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও প্রতিদিনের মতো কাজ করতে হয় তাদের। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ ও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন তারা। এখানে কর্মরত শ্রমিকরা দিন রাত বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে কাজ করেন। যুগের পর যুগ কাজ করে গেলেও কখনো তাদের কেউ বলেননি মে দিবসের কথা।
সরেজমিনে জেলার আশুগঞ্জের নৌবন্দরে গিয়ে জানা যায়, আশুগঞ্জ নৌবন্দরের গোড়াপত্তনের শুরু থেকেই জাহাজের বিভিন্ন পণ্য খালাসের কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। এখানে রেলপথ, নৌপথ ও সড়ক পথে বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এ কারণে এ বন্দরের গুরুত্ব অনেক। পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে শ্রমিকের সংখ্যা। বর্তমানে এই বন্দরে দুই সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করেন।
এদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নওগাঁ ও ময়মনসিংহসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। এসব শ্রমিক সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্য জাহাজ থেকে ওঠানো ও নামানোর কাজ করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জাহাজের শ্রমিকরাও এই বন্দরে কাজ করেন।
এই বন্দরে কাজ করতে আসা বিভিন্ন শ্রমিক জানান, মে দিবস সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। কোনো দিবসেই তারা বন্ধ পান না। শুধুমাত্র বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবেই বন্ধ পান তারা।
এই বন্দরের শ্রমিকদের সরদার মো. আলমগীর হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ এখানে কাজ করছি। কিন্তু কখনোই কোনো মালিক আমাদের মে দিবসের কথা বলেনি। শুনেছি শ্রমিকদের জন্য একটি দিবস আছে। আমরা এই দিবসে কখনো ছুটি পাই না। এছাড়া কাজ না থাকলে আমাদের সংসার চলে না। তাই আমরাও কাজ বন্ধ রেখে চলতে পারি না।’
বন্দরে কাজ করতে আসা কিশোরগঞ্জের আমির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি প্রায় ৫ বছর যাবৎ এই বন্দরে কাজ করছি। এর মধ্যে আমাকে কখনো কেউ মে দিবসের কথা বলেনি। আমরা শ্রমিক, তাই প্রতিদিন কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। মালিকরা যদি আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করত, তাহলে আমরা হয়তো দিনটি পালন করতে পারতাম।’
আরেক শ্রমিক খুরশিদ মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দিনটি সম্পর্কে শুনেছি। তবে আমরা কখনো এই দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করতে পারি নাই। আমাদেরকে কোনো প্রকার সুযোগ দেয়া হয় না। আমরাও এই দিবসটি পালন করতে চাই। পাশাপাশি ন্যায্য মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও আমরা পেতে চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি এ.কে.এম হাবিবুল্লাহ বাহার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নৌবন্দরের শ্রমিকদের কোনো সংগঠন নাই। পাশাপাশি তারা কোনো বেতনভুক্ত শ্রমিকও নয়। এ কারণে তাদের এই সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করব মে দিবসে তারা যেন ছুটি পায়।’
আশুগঞ্জ উপজেলার শ্রম কল্যাণ সংগঠক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সকলকেই মে দিবসের কথা জানানোর চেষ্টা করেছি।’
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আমরা এ বিষয়গুলো শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নৌবন্দরের শ্রমিকদের অবগত ও সচেতন করার জন্য কাজ করব। পাশাপাশি শ্রমিকরা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার ও বেতন-ভাতা পায় সেজন্য আমরা কাজ করব।’