ফণী আতঙ্কে জয়মনির চিংড়ি ঘেরের মালিকরা
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে উত্তাল খুলনা, সাতক্ষীরা ও মংলা উপকূলীয় অঞ্চল। এসব অঞ্চলে ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে।
শনিবার (৪ মে) ভোর থেকেই এসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব রয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে ফণী এসব এলাকায় আঘাত হানতে পারে।
এদিকে, ফণীর আঘাত হানার আশঙ্কায় আতঙ্কে সময় পার করছেন মংলা জয়মনি ঘোল এলাকার বাগদা চিংড়ি ঘেরের চাষি ও মালিকরা। তারা আশঙ্কা করছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যদি জলচ্ছ্বাস হয় তাহলে জয়মনি ঘোলের পাশের পশুর ও শেলা নদীর লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাবে ঘের। পানির তোড়ে ঘেরের বাঁধ ভেঙে চিংড়ি নদীতে ভেসে যাবে। অন্যদিকে, ঘেরে লবণাক্ত পানি ঢুকলে চিংড়ি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।
সরেজমিন দেখা যায়, মংলা থেকে জয়মনি ঘোল উপকূলীয় এলাকায় যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে শত শত বিঘা জমির ওপর চিংড়ি ঘের রয়েছে। ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে করে নদী ও ঘেরের পানি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। পানির স্তর আর একটু বাড়লেই ঘেরের পানির সঙ্গে মিশে যাবে পশুর ও শেলা নদীর লবণাক্ত পানি।
জয়মনি ঘোল এলাকার চার বিঘা জমিতে চিংড়ি ঘের রয়েছে মো. দাওয়াত শেখের। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সিডর ও আইলার সময় ঘেরে লবণাক্ত পানি ঢুকে যে ‘আজন্মা’র (চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ চাষের অনুপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখন নতুন করে ফণীর কারণে লবণাক্ত পানি ঢুকে গেলে এসব ঘেরে কমপক্ষে ১০ বছর মাছ চাষাবাদ করা যাবে না। কারণ লবণাক্ত পানির কারণে ঘেরে মাটি বিষাক্ত হয়ে যায়। ফলে নতুন করে চিংড়ি মাছ চাষ করা সম্ভব হবে না।
জয়মনি ঘোল এলাকার দুই বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ির ঘের করেছেন কুলিন মণ্ডল। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এখনও পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, সামনে বিপদই আছে আমাদের। যেভাবে আবহাওয়া বার্তা বলা হচ্ছে, সেভাবে ঘূর্ণিঝড় হলে আমাদের সব ঘের পানিতে তলিয়ে যাবে। তাতে কেজি কেজি ওজনের মাছ তো যাবেই সেই সঙ্গে কয়েক বছরের জন্য আজন্মা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
এদিকে, জয়মনি ঘোল এলাকার সাদাত শেখ ও অলক হালিদার নামে দুই চিংড়ি ঘের চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা ঘেরে তাদের ৫০-৬০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। এখন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যদি ঘের লবণাক্ত পানিতে ডুবে যায়, তাহলে তারা লাখ লাখ টাকার চিংড়ি হারাবেন।
ঘের মালিকদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মংলার কোস্টাল কমিউনিটি রেজিলিয়ান প্রজেক্ট ম্যানেজার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. মাহমুদুল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জয়মনি ঘোল এলাকায় জলচ্ছ্বাস হতে পারে। কারণ এলাকাটি খুব নিচু আর দুই পাশে দুই নদী। জলচ্ছ্বাস হলে ঘেরগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে লবণাক্ত পানি ঢুকে এসব ঘেরে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।