শত প্রতিকূলতায়ও যেখানে থেমে নেই জীবনযুদ্ধ

  • মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, দাকোপ থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফণী আতঙ্ক ভুলে গলদা পোনা ধরছেন স্থানীয়রা/ছবি: সুমন শেখ

ফণী আতঙ্ক ভুলে গলদা পোনা ধরছেন স্থানীয়রা/ছবি: সুমন শেখ

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিপদ কেটে গেছে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে সাত নম্বর থেকে নামিয়ে তিন নম্বর সর্তকতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে।

তবে বিপদ কেটে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ঘূর্ণিঝড় ফণীর চিহ্ন রয়ে গেছে খুলনার দাকোপ উপজেলার পশুর নদীর তীরবর্তী বানীশান্তা ইউনিয়নে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ইউনিয়নটির পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সাড়ে ৫'শ ফুটের একটি বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে প্রায় ৫০০ ঘর প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী শত শত মানুষ। অনেকে আবার হারিয়েছেন সবকিছু।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এতো কিছুর পরও বেঁচে থাকার যুদ্ধ থেমে নেই বানীশান্তা ইউনিয়নের মানুষের। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

শনিবার (৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর বানীশান্তা ইউনিয়নের পাশ ঘেঁসা পশুর নদী প্রায় শান্ত। যা ক্ষতি হবার তা রাতেই হয়ে গেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস তাদের, ঝড় তুফানে ভয় পেলে চলবে?

বিজ্ঞাপন

তাই কারো অপেক্ষা না করেই বানীশান্তা ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দার দ্রুত বস্তা আর মাটি দিয়ে কোনো মতে বাঁধের ভাঙা অংশের মুখ আটকালেন। এতে করে নদী থেকে গ্রামে পানি প্রবেশের গতি কমে গেলেও বাঁধটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

ঘড়ির কাটায় বেলা তখন ২টা ১০ মিনিট। আকাশে তখনও কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, সঙ্গে হালকা বাতাস। কিছুক্ষণ আগের ফণী আতঙ্ক ভুলে পশুর নদীতে নেমেছেন জীবিকার টানে।

Banishanta
 বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা/ছবি: সুমন শেখ

 

পরিবারের সবাই ছোট ছোট বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে ধরছেন গলদা চিংড়ির পোনা। এ এলাকায় জীবিকার অন্যতম একটি উৎস পশুর নদী থেকে গলদার পোনা ধরে বিক্রি করা।

তবে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো যারা গলদার পোনা ধরতে নেমেছেন তাদের অনেকের পরিবারই বাঁধ ভাঙার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। কারো হয় ঘর ভেঙেছে, কারো হারিয়েছে গবাদিপশু আবার কারো ঘরের চাল,ডাল ও ধান সবই ভেসেছে পানিতে।

কিন্তু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনযুদ্ধে না হারার শিক্ষা পেয়েছেন তারা। ভয়াবহ দুর্যোগ প্রবণ উপকূলীয় এলাকায় সংগ্রাম না করলে টিকে থাকা যাবে না। তাই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঁচতে শিখেছেন তারা।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে বাঁধ ভেঙে রিনা বেগমের ঘরে কোমর পানি হয়েছিল। এতে ঘরে থাকা ধান চালসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায় পানিতে ভেসে।

তবুও তিনি পশুর নদীতে নেমেছিলেন গলদা চিংড়ি পোনা ধরতে। পোনা ধরা শেষে নিজেদের জীবনযুদ্ধ সম্পর্কে তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, এখানে হরহামেশা ঝড় তুফান লেগেই থাকে। কখনও ভাঙে বাঁধ আবার কখনও ভাঙে ঘর। তারপরও বাঁচার জন্য যুদ্ধ করতে হয়। যা হবার তাতো হয়েছেই, এটা তাদের জন্য নতুন কিছু না। এখন বেঁচে থাকার জন্যই কাজ করতে হবে। তাই ঝড়-তুফান যা-ই হোক না কেনো তাদের নদীতে নামতেই হয়।

বিজয় মিশ্রের ঘরের চালা ভেঙেছে ফণীর তণ্ডবে। ছোট ভাই ও দুই ছেলেকে দিয়ে সে ঘর ঠিক করাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজে এসেছেন পশুর নদীতে গলদার পোনা ধরতে।

তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, উপকূলীবাসীর জীবনে তো ঝড় বৃষ্টি প্রতিনিয়তই লেগে থাকে। তাই বলে কি পেটে ক্ষুধা থাকবে না? তাই আবহাওয়া যাই হোক না কেন পোনা তাদের ধরতেই হয়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি ১০০ পিস গলদা পোনার বিনিময়ে বেপারির কাছ থেকে ৪০ টাকা পান তারা। একেকজন সারাদিন পোনা ধরলে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতে পারেন। আর তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। এলাকার বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় শত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের কাজ করতে হয়। তাই প্রতিকূলতাই তাদের জীবনের নিয়মিত জীবনের অংশ।