বগুড়ায় কৃষকের সোনালী স্বপ্ন এখন পানির নিচে
গত দুইদিনের বৃষ্টিতে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে থাকা ধান কাটতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। প্রয়োজনীয় পুরুষ শ্রমিক না পাওয়ায় নারীরাও ধান কাটতে মাঠে নেমেছেন।
রোববার (৬ মে) বগুড়া সদর, কাহালু ও গাবতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের এ চিত্র দেখা যায়।
বগুড়া সদরের শহরদিঘী গ্রামের মর্জিনা বেগম বাকপ্রতিবন্ধী স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এক হাঁটু পানিতে নেমে ধান কাটছেন। ধান কাটা শ্রমিক না পেয়ে তিনি নিজেই বাধ্য হয়ে জমিতে নেমেছেন। মর্জিনা বেগম বার্তা২৪.কমকে জানান, সোয়া তিন বিঘা জমিতে বোরো ধার চাষ করেছেন। সময় মতো সেচ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় বাম্পার ফলনের আশাও করেছিলেন। আর মাত্র এক সপ্তাহ পর ধান কেটে ঘরে তোলাও স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার (৩মে) ও শনিবার (৪ মে) দু’দিনের বৃষ্টি আর একই সঙ্গে বাতাসে জমির ধান গাছ হেলে পড়ে। পাশাপাশি জমিতে একহাঁটু পানি আটকে যাওয়ায় হেলে পড়া ধানগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম ১৪ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তার ধানেরও একই অবস্থা। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দ্রুত ধান কাটতে না পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ির কাছাকাছি জমি হওয়ায় তিন হাজার টাকা বিঘা ধান কাটতে রাজী হয়েছে কয়েকজন শ্রমিক। টাকা ছাড়াও তাদেরকে তিন বেলা খাওয়া, থাকার ব্যবস্থা। এছাড়া প্রত্যেক শ্রমিককে দিনে দুই প্যাকেট বিড়ি দিতে হচ্ছে। তার পরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধান ডুবে যাওয়ায় একদিকে যেমন ফলন কম হবে অন্যদিকে জমিতে পানি থাকায় শুধু ধানের শীষ কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে খড় কম পাওয়া যাবে।’
কাহালু উপজেলার বেলঘড়িয়া মাঠে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থেকে ধান কাটতে এসেছেন মোশারফ, জয়নাল, সামছুলসহ ১৬ জন শ্রমিক। তারা বলেন, প্রতি বছরই তারা বগুড়ায় ধান কাটার কাজে আসেন। এবার ধান কাটতে তাদের কষ্ট বেশি হচ্ছে। পানিতে ডুবে থাকা ধান কাটতে গিয়ে একদিকে জোঁকের আক্রমণ অন্যদিকে পানিতে ডুবে থাকা ধান কাটতে তাদের সময় বেশি লাগছে।
তিনবেলা খাওয়াসহ চার হাজার টাকায় বিঘা ধান কাটছেন বলেও জানান তারা।
বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চল কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি নন্দীগ্রাম উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম হলেও পূর্ব বগুড়ার গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। এসব উপজেলার নিচু জমির ধান একেবারেই তলিয়ে গেছে। পানি না কমলে কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন না।
গাবতলী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক ফয়েজ উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবার একদিকে ধান গাছে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে বৃষ্টি আর বাতাসে জমিতে যেটুকু ধান ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে।’
তার মতো অনেক কৃষকের এবার একই অবস্থা। ধান চাষ করে এবার তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে বগুড়া জেলার ১২ উপজেলায় এক লাখ ৮৯ হাজার ২৮ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ কমে যাওয়ায় অর্জন হয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৫৪ হাজার ৪০ মেট্রিক টন।
মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহাবুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বৃষ্টি এবং ঝড় বাতাসের কারণে এবার ধানের ফলন কম হবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আগাম ধান কাটতে কৃষি বিভাগ থেকে মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকেই আগাম ধান কাটতে পারেনি।’
আরও পড়ুন: বগুড়ায় আগাম ধান কাটতে কৃষি বিভাগের মাইকিং
আরও পড়ুন: ফণীর আঘাতে ভেঙে গেছে শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়া