মহাস্থানগড়ে সাধু-সন্ন্যাসীদের মিলনমেলায় ভাটা
প্রতি বছরের মতো বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বসে সাধু-সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের মিলনমেলা। তবে এ বছর মেলায় মানুষের উপস্থিতিতে ভাটা পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, রমজান মাস হওয়ায় এবং আবহাওয়া অধিক গরম হওয়ায় মেলায় সাধারণ ভক্তদের আগমন কম।
জানা গেছে, প্রতি বছরের এই দিনে হয়রত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজার জিয়ারত উপলক্ষে মুসলমানরা সারারাত ইবাদত করেন। আর মাজারের আশপাশের এলাকায় আধ্যাত্মিক সাধনা করতে আসেন সাধু-সন্ন্যাসী ও বাউল-সুফিরা। এ সময় তারা জিকির ও মারফতি গান গেয়ে আসর জমিয়ে রাখেন। আর আসরে পালা করে চলে গাঁজা সেবন। তবে এবার রমজান মাস হওয়ায় প্রশাসন থেকে সে আসর জমাতে দেওয়া হয়নি।
কথিত আছে, অত্যাচারী রাজা পরশুরামকে পরাজিত করে সুফি ও সাধক হয়রত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মহাস্থান বিজয় এবং নিজের সম্ভ্রম ও ধর্ম রক্ষার জন্য পরশুরামের একমাত্র বোন শিলা দেবীর করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জনের দিন বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। সেই থেকেই পরবর্তী বছরগুলোতে এই দিনে মহাস্থানগড়ে উভয় ধর্মের মানুষ সমবেত হন। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে সাধু-সন্ন্যাসীদের মেলা।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগির জন্য শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজারে অবস্থান নিলেও সাধু-সন্ন্যাসী ও বাউলরা অবস্থান নেন পাশ্ববর্তী হযরত বোরহান উদ্দিনের (র.) মাজার, পশ্চিম পাশের মেহগনি বাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকায়। এছাড়া মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থান এলাকায় বসে মেলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হযরত বোরহান উদ্দিনের (র.) মাজার ও পশ্চিমে মহাস্থান বাগান চত্বরে কথিত সাধু-সন্ন্যাসীরা লুকিয়ে গাঁজা সেবন করছেন। শুধু গাঁজা সেবনই নয় বিভিন্ন স্থানে সামিয়ানা টাঙিয়ে মারফতি গানের আসর বসিয়েছেন বাউল সাধকরা। তবে এবার বাউল সাধকদের সংখ্যা অনেক কম। মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব সাধু-সন্ন্যাসী সমবেত হয়েছেন তারা প্রশাসনের কঠোরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
রাজশাহী থেকে আসা ডা. খলিল জালালী, সাতক্ষীরা থেকে আসা আবুল কাশেম পাগল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত কয়েকবছর ধরে সাধু-সন্ন্যাসীদের অনুষ্ঠান করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই মহাস্থানগড়ে সাধু-সন্ন্যাসীদের আগমন কমছে। সাধু-সন্ন্যাসীরা আত্মার শান্তির জন্য বছরে একদিন আসেন। এখানে আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য আমরা সিদ্ধি সেবন করি ও মারফতি গানের আসর বসাই। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন ও ধর্মের নামে কিছু উগ্রগোষ্ঠী আমাদের এখান থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে।’
এদিকে, মাজার জিয়ারতের দিন অর্থ ও খাবার পাওয়ার আশায় মাজার এলাকায় অগণিত ফকির-মিসকিন সমবেত হয়। বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় তারা সারিগান গেয়ে মাজার চত্বর মুখরিত করে রাখে। মহাস্থানে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ও আশা পূরণের জন্য অনেকেই মাজারের পশ্চিমপাশে পাথরে দুধ ঢালে।
শুধু সাধু-সন্ন্যাসী আর পুণ্যার্থীরাই নয়, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষও সমবেত হন মহাস্থানগড়ের এই মেলায়। মাজারের পশ্চিম পাশের মাঠে হরেক রকম পণ্য নিয়ে বসে মেলা। মেলায় দর্শণার্থীরা নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী ক্রয় করেন। এছাড়া মহাস্থানের ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত কটকটি বিক্রি হয় বেশি।
মহাস্থানগড় মাজার-মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মাজার কমিটির পক্ষ থেকে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে।’