হোটেলে কাজ করেই জীবন চলে সত্তরোর্ধ্ব মায়ের
‘ছেলেরা ভালো বাবা, ওদের নাম লেখ না, ওদের সংসারেই অভাব। দুই ছেলের ঘরে সাত জন নাতি নাতনি। সারাদিন রোদের মধ্যে রিকশা চালায়। আমিতো হোটেলে ফ্যানের নিচে টেবিল পরিষ্কার আর পানি দেওয়ার কাজ করি। আমার ছেলেদের কষ্টের শেষ নাই।’
বিশ্ব মা দিবসে এভাবেই সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেন সত্তরোর্ধ্ব এক মা আলেফা বেওয়া। তিনি বগুড়া সদর উপজেলার ফাপোর মণ্ডলপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর স্ত্রী। কাজ করেন কৈচড় বাজারে তোফাজ্জল ওরফে তোফার হোটেলে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হোটেলে টেবিল পরিষ্কার এবং টেবিলে পানির গ্লাস এগিয়ে দেওয়া তার কাজ। দুই বেলা হোটেলে খাওয়া ছাড়াও ১০০ টাকা দিন তার পারিশ্রমিক।
আলেফা বেওয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার ছেলেরা ভাল, ছোট বেলায় তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর মানু্ষের বাড়িতে কাজ করে ওদেরকে বড় করেছি। আমাকে ভাত না দিলেও কোনো দুঃখ নাই। ওরা ভাল থাকুক।’
তিনি বলেন, ‘দুই ছেলে এক মেয়ে ছোট থাকতেই তাদের বাবা মারা যায়। স্বামীর তিন শতাংশ ভিটেমাটি ছাড়া সম্পদ বলতে কিছু নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর মানুষের বাড়িতে কাজ করে তিন সন্তানকে বড় করেছি। মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। ছেলেদেরকে লেখা পড়া করাতে না পারায় তারা এখন রিকশা চালায়। বড় ছেলে আলম বাদশার ঘরে তিন ছেলে, ছোট ছেলে মিছির আলীর ঘরে তিন মেয়ে এক ছেলে।’
ছেলেদের সংসার ঠিকমত চলে না উল্লেখ করে আলেফা বেওয়া বলেন, ‘হোটেলে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে নিজের ওষুধ কিনতে হয়। এরপর নাতিদের জন্য কিছু টাকা রেখে দিতে হয়। বয়স্ক ভাতার যে টাকা উত্তোলন করি সেটাও নাতিদের লেখা পড়ায় দেই।’
দুই ছেলে তাকে ভাত কাপড় না দিলেও ছেলে এবং নাতিদের ওপর ভালোবাসার কোনো কমতি নেই বরেও জানান আলেফা বেওয়ার।
ফাপোড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহরম আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আলেফা বেওয়াকে বয়স্কভাতার কার্ড করে দিয়েছি। সরকারি সুবিধা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কারণে তাকে ভিজিএফ বা ভিজিডি কার্ডের আওতায় আনা যাচ্ছে না।’