৩৭ বছর ধরে তারাবি নামাজ পড়ান হালিম হুজুর

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হালিম হুজুর। ছবি: বার্তা২৪.কম

হালিম হুজুর। ছবি: বার্তা২৪.কম

‘প্রায় ৩৭ বছর আগের কথা। তখন আমি গৌরীপুর ছদরুদ্দিন (র) হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র। ওই বছর রমজান মাসে স্থানীয় বড় মসজিদে তারারির নামাজে ইউসুফ হুজুর ও আমি ইমামতি করি। পরের বছর কালীপুরের মসজিদুল আমান জামে মসজিদে তারাবি পড়ানোর জন্য ইমাম খোঁজ করছিল এলাকাবাসী।

রমজান মাস শুরুর পূর্বে একদিন স্থানীয় বাসিন্দা হাছেন মুন্সী, সিরাজুল ইসলাম ও তালেব হোসেন আমাকে তারাবির ইমামতি করতে অনুরোধ করে। আমিও রাজি হয়ে যাই। এরপর থেকে টানা ৩৬ বছর ধরে রমজান মাসে ওই মসজিদেই তারাবির ইমামতি করছি। এর জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে অশেষ শুকরিয়া।’

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্ত আলাপে কথাগুলো বলছিলেন মসজিদুল আমানের ইমাম ও খতিব হাফেজ মৌলভী শামছুল আলম ভূঁইয়া ওরফে হালিম হুজুর (৬০)। টানা ৩৭ বছর ধরে তিনি তারাবির নামাজে ইমামতি করছেন। তার বাড়ি উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামে। বাবা মৃত আনির উদ্দিন।

গতকাল রোববার (১৯ মে) বাদ জোহর মসজিদে বসে কথা হয় হালিম হুজুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিকে পড়াশোনার সময় ছদরুদ্দিন (র) হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হই। হাফেজ হওয়ার পর পড়াশোনার খরচ যোগাতে শিক্ষকতা করে বোকাইনগর ফাজিল মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম ও ফাজিল পাস করি। জীবিকার তাগিদে ১৯৮৯ সালে স্থানীয় একটি মাদরাসায় জুনিয়র মৌলভী পদে যোগ দেই। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ চাকরি নিশ্চিত করার জন্য ১৮ হাজার টাকা ঘুষ চায়। আমি ঘুষ না দিয়ে চাকরিটাই ছেড়ে দেই। পরে ১৯৯৩ সালে মসজিদুল আমানে ইমাম হিসেবে কাজ করার নিয়োগপত্র পাই।’

বিজ্ঞাপন

হালিম হুজুরের বাড়ি উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের গড়পাড়া গ্রামে। মসজিদে থাকার সুযোগ নেই, তাই বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে মসজিদে এসে তারাবিসহ প্রতি ওয়াক্তের নামাজ পড়ান তিনি।

হালিম হুজুর বলেন, ‘রমজানের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ তারাবির নামাজ গুনাহ মাফের একটি বিশেষ সুযোগ। তাই আল্লাহপাক সবাইকে তারাবির নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন।’ এ সময় ইসলামের সঠিক বার্তা সকলের মাঝে পৌঁছে দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

দাম্পত্য জীবনে হালিম হুজুরের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে জাফরিন এমবিএ ও ছোট মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সানী স্থানীয় একটি মসজিদে তারাবির ইমামতি করছেন। ছোট ছেলে সাইফ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মসজিদ থেকে প্রাপ্ত সম্মানী ও কৃষিকাজ করে সংসারসহ সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালান তিনি।

হালিম হজুরের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আগমন ঘটে স্থানীয় বাসিন্দা আহসান হাবীব সেলিমের। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই হুজুরের পেছনে নামাজ পড়ছি। ওনার মিষ্টি কণ্ঠের ক্বিরাত ও কোরআন তিলাওয়াত মনের গভীরে স্পর্শ করে। প্রার্থনা করি আল্লাহপাক ওনার সকল স্বপ্ন পূরণ করুক।’

কথার রেশ টেনে হালিম হুজুর বলেন, ‘আল্লাহ পাকের ইবাদত করতে করতে যেন মৃত্যুবরণ করতে পারি, এটাই আমার স্বপ্ন। আর গ্রামে একটি মাদরাসা করারও স্বপ্ন আছে। এ জন্য ব্যক্তিগত ৫ কাঠা জমি রেখেছি। কিন্তু অর্থাভাবে কাজ শুরু হচ্ছে না। আল্লাহ পাক চাইলে স্বপ্নগুলো পূরণ হয়ে যাবে।’

শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন হালিম হুজুর। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মসজিদে তার ছাত্ররা দায়িত্বে আছেন। তাদেরই একজন গৌরীপুর বড় মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মো. মোস্তাকিম। রোববার রাতে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘আমি ছোট বেলায় হালিম হুজুরের কাছে পড়েছি। তিনি একজন ভালো মানুষ। এই বয়সেও তিনি সুস্থভাবে তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন, এটা আল্লাহ পাকের একটি নিয়ামত।’