পাবনায় শিক্ষকদের আত্তীকরণ ফাইল থানা হেফাজতে!

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পাবনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাবনা জেলা, ছবি: সংগৃহীত

পাবনা জেলা, ছবি: সংগৃহীত

পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণ নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। এ নিয়ে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজের অধ্যক্ষ একে অপরকে দোষারোপ শুরু করেছেন।

ইতোমধ্যে কলেজের ১৩৮ জন শিক্ষকের আত্তীকরণের ফাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার চাটমোহর থানার নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, এই জটিলতা নিরসনে অজুহাত দেখিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গত সোমবার (২০ মে) নাটকীয়ভাবে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘ফাইলগুলো একাধিকবার কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি তা গ্রহণ করেননি। এমন কি উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এবং আমার ফোন থেকে তার ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও কল রিসিভ করেননি।’

বিজ্ঞাপন

ইউএনও বলেন, ‘অধ্যক্ষ ফাইলগুলো গ্রহণ না করায় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে তার পরামর্শে আমি চাটমোহর সরকারি কলেজের ১৩৮ জন শিক্ষকের আত্তীকরণ ফাইল চাটমোহর থানার নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দিয়েছি।।‘

তিনি বলেন, ‘এজন্য পরবর্তীতে ফাইলগুলো পাঠাতে দেড়ি হওয়ার কারণ বলতে হবে। তারপর কি হবে সেটা সংশ্লিষ্ট দফতরের ব্যাপার।’

ইউএনও এ জন্য অধ্যক্ষকে দায়ী করে বলেন, ‘কলেজের ১৩৮ জন শিক্ষকের জীবন নিয়ে খেলছেন অধ্যক্ষ।’

এদিকে, মোবাইলফোনে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে পাওয়া না গেলেও তার বিশ্বস্ত একটি মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই মাধ্যমে জানান, ৫ মে’র মধ্যে ওই ফাইলগুলো পাঠানোর কথা। ডিজি বরাবর একাধিকবার সময় চেয়ে আবেদন করলেও ইউএনও (সভাপতি) কোন ধরণের সহযোগিতা করেননি। আমি তাকে সমস্ত ফাইল দিয়েছি। কিন্তু তিনি কলেজে আসেননি। উল্টো ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছেন। আমি তার বরাবর ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছি।

অধ্যক্ষ মিজানুর বলেন, ‘ইউএনও (সভাপতি) ইতোমধ্যে আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে কতিপয় শিক্ষককে ব্যবহার করে অভিযোগও দিয়েছেন। শুনেছি তদন্ত কমিটি হয়েছে। কেবল একটি চিঠি পেয়েছি, কোন তদন্ত এখনও হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমি সময় চলে যাওয়ার পর ডিজি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন বিশেষ আবেদন করতে হবে। সে কারণেই আইনগতভাবে সমাধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। এখন সময় লাগবে।’

অধ্যক্ষ মিজানুরের মন্তব্য, কলেজের সভাপতি, ইউএনও কোনো সহযোগিতা করেননি। শিক্ষকদের ফাইল পাঠানোর জন্য যে দেড়ি হয়েছে, তার জন্য ইউএনও-ই একমাত্র দায়ী। এই পরিস্থিতি তৈরির পেছনে তার কারিশমা রয়েছে এমন দাবি অধ্যক্ষের।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ নাসীর উদ্দিন রোববার বেলা ১১ টায় মোবাইলফোনে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে কলেজের ফাইলগুলো থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে চাটমোহর সরকারি কলেজের শিক্ষকরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করছেন। বিস্তারিত পরে বলা যাবে।’

প্রসঙ্গত, সদ্য জাতীয়করণকৃত চাটমোহর সরকারি কলেজের শিক্ষকদের আত্তীকরণের ফাইল সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো নিয়ে কলেজের সভাপতি, অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভুয়া শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে মূলত এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে প্রাণনাশের চেষ্টা ও চাকরিগত হুমকির অভিযোগ এনে ৪১ জন শিক্ষক থানায় জিডি করেছেন।

অন্যদিকে অধ্যক্ষ ও তার অনুসারী শিক্ষকরা পাল্টা ৪১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। শুধু জিডিতেই থেমে নেই শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে তারা পৌর এলাকায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ ও পোস্টারিংসহ বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও পথ সমাবেশে অব্যাহত রেখেছেন।